মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
রংপুর প্রতিনিধি:: রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীকে লড়ছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু ও জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) আনিসুল ইসলাম মন্ডল। ইতোমধ্যে তিন প্রার্থীর প্রচারণা জমে উঠেছে। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, তারাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান লিটনসহ তিন ইউপি চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বিটুকে সমর্থন দিয়ে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশাপাশি দুই উপজেলার কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্বনাথের পক্ষে আছেন।
তবে সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে রয়েছেন। কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করছেন। এতে নৌকার ভোটে প্রভাব পড়বে না। কারণ গত ১০ বছরে নির্বাচনি এলাকা বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে প্রচুর উন্নয়ন করেছি। রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন দৃশ্যমান। ফলে জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে আবারও জয়ী করবে।’
অপরদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দলের নেতাকর্মীদের তার পক্ষে প্রচারণায় নামাতে সক্ষম হয়েছেন। তার প্রচারণায় লোকসমাগম দেখা যাচ্ছে। ফলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আনিসুল ইসলামও।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুমনা আক্তার লিলির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। পরে আপিল করলে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর বিশ্বনাথ সরকারকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন সুমনা আক্তার। বর্তমানে তিনি বিশ্বনাথের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বতন্ত্র প্রাথীর পক্ষে রয়েছেন।
জাপা প্রার্থীর অভিযোগ
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী পছন্দের ব্যক্তিদের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ থানায় রাখার জন্য ১৫ দিনে তিনবার ওসি বদল করিয়েছেন। পুলিশ প্রটোকলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। জাপার কর্মী-সমর্থকদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তার প্রধান নির্বাচনি এজেন্টকে বেনামে চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থী জোর করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাইনি।’ জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এখানে লাঙ্গলের জয় হবে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ
বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তার কর্মীরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন। আমার প্রতীক ট্রাকের প্রচারণায় অংশ না নিতে দলীয় নেতাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। গত শনিবার বদরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনি জনসভায় বাধা দিয়েছেন। সেদিন আমার এক কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছেন নৌকার লোকজন। এত কিছুর পরও ট্রাকের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমি জয়ী হবো।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার জনপ্রিয়তা দেখে ভীত হয়ে পড়েছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। নৌকার পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিপুল ভোটে জয়ী হবো।’
জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, এই আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৫৬ হাজার ৫৯২ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৭৭ হাজার ২৪ এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ জন।