রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৯:০৮ অপরাহ্ন

শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

পৌষের শেষে শীত জেঁকে বসেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, শীতে কনকনে হিম ঠান্ডার অনুভূতি হয়। শহরে যেমন বস্তি, ফুটপাত ও রেলস্টেশনের খোলা জায়গায় থাকা হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। তেমনি গ্রাম অঞ্চলে শীতের দাপট বেড়ে যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ শীতের সময় বেশি দুর্ভোগে পড়েন। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, যা কোথাও কোথাও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। আবার শৈত্যপ্রবাহ নতুন অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ফলে সার্বিক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া সমীচীন, তীব্র শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ এমন বিষয়ও জানা যাচ্ছে। শীতের প্রকোপে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তে রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। ফলে এটি আমলে নিতে হবে। জানা যাচ্ছে, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা যার মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া নিউমোনিয়া, বাত-ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। এছাড়া এ সময়ে করণীয় কী, এ সংক্রান্ত প্রচার প্রচারণাও জরুরি। যেন মানুষ সচেতন হতে পারে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের শীতবস্ত্র বিতরণসহ সাহায্য সহযোগিতাও নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, এমন তথ্যও সামনে আসছে যে, বিভিন্ন জেলায় তীব্র শীতের সঙ্গে বাতাস আর ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের প্রকোপে দুর্ভোগ বেড়েছে দরিদ্র, খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষের। এছাড়া ঠান্ডায় মানুষের সঙ্গে কাঁপছে প্রাণীকুলও।

তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। রোদ না ওঠায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছে গবাদিপশুও। ফলে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গৃহস্থ, কৃষক ও খামারিরা। দাম চড়া হলেও মানুষ শীত নিবারণের জন্য বাধ্য হয়েই গরম কাপড় কিনছেন। কিন্তু নিম্ন আয়ের গ্রামের গরিব মানুষের একমাত্র ভরসা পুরনো কাপড়। সেই পুরনো গরম কাপড়ও মিলছে না ২০০-৩০০ টাকার নিচে এমন তথ্যও উঠে এসেছে। আর হিমেল হাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগও বেড়েছে।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে মনে রাখা দরকার, শীতের প্রকোপে বরাবরের মতো এবারও সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। দরিদ্রদের আরেকটি বড় সমস্যা হলো, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যেসব খাবার থাকে, এর মাধ্যমে জীবনধারণের কাজটি কোনোমতে চললেও যথাযথ পুষ্টিমান রক্ষা হয় না। পুষ্টিহীন জীর্ণশীর্ণ শরীরে রোগব্যাধি প্রতিরোধের ক্ষমতা এমনিতেই কমে যায়। ফলে শীতে তারা সহজেই কাবু হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণেই ধনবানদের পাশাপাশি দরিদ্ররাও যাতে দৈনিক নূ্যনতম পুষ্টি চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়, এ ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

সর্বোপরি বলতে চাই, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীতের প্রকোপে জনজীবনে যে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিত্তবানরা শীতের পোশাক ব্যবহার করে পরিত্রাণ পেলেও, শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়- যে বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। এ অবস্থায় দরিদ্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি আছেন, যারা নানা উপলক্ষে অর্থ ব্যয় করে থাকেন। তারা অনায়াসেই হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়া দরিদ্রদের শীতকালীন সংকট নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে শীতজনিত রোগের প্রকোপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং যথাযথভাবে এর ব্যবহার হচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারেও তদারকি প্রয়োজন। বয়স্ক ও শিশুদের রোগ বাড়ছে এটি আমলে নেওয়ার পাশাপাশি সমাগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution