রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন

কথায় কথায় কথা দিয়ে ফেলা!

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক, একুশের কন্ঠ : আমাদের জীবনে প্রতিশ্রুতি বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু পূরণের মানসিকতা কমে যাচ্ছে। আমরা কথায় কথায় কথা দিয়ে ফেলি! রাজনীতি, সামাজিকতা কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্ক-সর্বত্র প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি অথচ কথা রাখার ইচ্ছাটুকুও দেখাই না। স্বার্থ উদ্ধার হলেই পাল্টে যাই, পল্টি লই। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের সেভাবে কৈফিয়ত দিতেও হয় না আবার অন্তরে নীতি-নৈতিকতার ভয়-বালাইও নাই! লজ্জা-শরম আছে কি নাই-সে বিতর্কে আজ আর না জড়াই!

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদেরকে যারা পাকড়াও করবে তারা আরও বড় বড় প্রতিশ্রুতি ভেঙে বসে আছে! আশাহতদের আশায় কেবল, ‘কেয়ামতের দিন এদের জিহ্বা আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হবে’-সেটা দেখার! মানুষ নির্লজ্জভাবে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে এবং সেটা রক্ষা করার একটুকু মানসিকতাও অন্তরে লালন করে না। মানুষের ভেতর-বাহিরের চরম অমিলে বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে, ভরসা উঠে গেছে। কে, কীভাবে স্বার্থ আদায় করবে, কার পকেট কত তাড়াতাড়ি ভরবে, কে কতোখানি ভোগ করবে-সে অকৌশলে মাতোয়ারা।

যে যত মিথ্যা আশ্বাস দিতে পারে তার গ্রহনযোগ্যতা তত বেশি-সেটা হোক ব্যক্তির সম্পর্কে কিংবা বাছাইয়ে! দোষ যে একপাক্ষিক তাও না! আমরা প্রাপ্তির চেয়ে দোষ ধরতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারো প্রশংসা করতে পারলে যেটুকু খুশি হই তার অধিক ভালো লাগে কাউকে গালি দিতে পারলে! তুমি এটা দিলে না, সেটা দিলে না-বলতে পারার মধ্যেই সব তৃপ্তি যেনো লুকিয়ে থাকে! কিছু পেলে তো পাওয়াই হয়ে গেল বরং না পেয়ে যদি কথা শোনাতে পারি তবে আনন্দ পাই! সামগ্রিক অসুস্থতায় জর্জরিত হয়ে আছি!

কেউ আমাকে খালি খালি গালি দিতে পারে না! নিশ্চয়ই আমি কাউকে জানোয়ার বলার পরেই সে আমাকে জানোয়ারের বাচ্চা বলার সাহস দেখায়! জিহ্বাকে সংযত করতে হবে। সবচেয়ে নরম অঙ্গ দিয়ে ঘৃণার সম্পর্ক সৃষ্টি করা ঠিক নয়। লোভ এবং ক্ষোভ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলে মানুষ দূর থেকে হলেও সম্মান করবে। ছোট্ট আয়ুর জীবনে স্বার্থহীনভাবে একটুখানি সম্মান পেলে তারচেয়ে পরিতৃপ্তির আর কিছুই নাই।

চরিত্রবান হতে হবে। যে প্রত্যাশা পূরণের সামর্থ্য ও ইচ্ছা নাই সে প্রতিশ্রুতি প্রদান থেকে বিরত থাকলে আমাকে কেউ গুঁতাবে না। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কারো মনে কষ্ট দেয়ার স্বভাব পাপের বাপ। কথা দিতেই হবে-বিষয়টি তেমন নয় বরং যেটুকু সাধ্যে আছে, শক্তিতে কুলোয় সেটুকুই যেনো বলি। তবেই অনেক অশান্তি থেকে প্রশান্তি পাওয়া যাবে। একবার মিথ্যুক, বাটপার কিংবা ধোঁকাবাজের খেতাব পেয়ে গেলে অনেকগুলো ভালো কাজের দ্বারাও সে বদনাম ঘুচানো যাবে না। বরং বংশ পরম্পরায় সে দায় বহন করতে হবে। আর সমাজে যারা পাপ করেন

তারা সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটাতেই থাকে! সে স্বভাব সকলের দ্বারে ঠেকে থাক।

মিথ্যা মনে রাখতে হয়! অতীতে কি বলেছিলাম সেটা মনে রেখেই পরবর্তীর জের টানতে হয়। অথচ সত্যের এই সমস্যা নাই। যে-কোন পরিস্থিতিতে যেটা বাস্তব-সঠিক সেটা বললেই অতীতের কথার সাথে মিলে যাবে। নতুন করে কিছুই মনে রাখার দরকার পড়বে না। একটা মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় হাজার মিথ্যা বলতে হয়! তাও যদি মিথ্যা বদলে যেত! মিথ্যা সর্বত্র মিথ্যাই। সত্য একটাই যথেষ্ট। আমি পারব কিংবা পারব না, আমি দেব কিংবা দেব না-এর চেয়ে স্বচ্ছ, সুন্দর কথা আর হয় না মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে পক্ষে টানলে লাথি দিয়ে আবার ফেরত আসবে-অতীত সেকথাই বলে! বিচ্ছেদ বাড়িয়ে লাভ নাই। সততার সম্পর্ক সুন্দর হয়। সেটা কাছ থেকেও সুন্দর, দূর থেকেও আলোকিত।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution