রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:২২ অপরাহ্ন

অর্থই জীবনের পরমার্থ নয়!

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক, একুশের কন্ঠ : বিতর্ক প্রবল-অর্ধজীবন পড়াশুনা করে যে চাকুরি জুটেছে সেখানে বেতন সাকুল্যে ২০-২৫ হাজারের মত! নাম দস্তখতের পরীক্ষায় কোনভাবে পাশ করা মেকানিক, গায়-গতরে খাটা প্রবাসীর আয় মাসে লক্ষাধিক! শিক্ষা কি তবে জলেই গেল? এতো এতো পাশ করে কী লাভ হলো?- যদি আয়ে অটোরিকশাওয়ালার চেয়ে পিছিয়ে থাকতে হয়, মাসের শেষাংশ কীভাবে কাটবে সেটা ভাবতে হয়-সমাজে এমন বিতর্কিত বিতর্কে অংশগ্রহণকারী বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কম নয়! জ্ঞানী আর বুদ্ধিমান একজিনিস নয় সে কথা মার্কাবাদী জনতাকে বোঝানো সহজ কাজ নয়!

একজন শিক্ষিত মানুষ যদি দু’পয়সাও আয় না করে তবুও সে শ্রেষ্ঠ! টাকা আয় করার দক্ষতার চেয়ে সে টাকা ব্যয় করার যোগ্যতার মূল্য অমূল্য। যে মানুষ দু’খানা বই পড়েছে সে সামান্য হলে বেশি জ্ঞানী, যিনি কিছুই পড়েনি তার চেয়ে। যে হেঁটেছে স্কুলের বারান্দায়, বসেছে আলোর কোলে, শুনেছে জ্ঞানীর কথা সে অর্থে গরীব হতে পারে কিন্তু নির্বোধ নয়। যার মাথায় একরাশ বই, সে মাথা একবস্তা টাকাওয়ালার চেয়ে ঢের উত্তম। জ্ঞানী জানে কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে আচরন করতে হয়, কীভাবে মিশতে হয়! দানব পয়সাওয়ালা কেবল জানে কীভাবে কিনতে হয়! সবকিছু যে অর্থে বিক্রি হয় না, টাকায় পাওয়া যায় না সেই বোধ তার নাই কেননা সে টাকার ভারে বুদ্ধিমান!

টাকায় সনদ কেনা যায় কিন্তু জ্ঞান কেনা যায় না। বই কেনা যায় কিন্তু শিক্ষা কেনা যায় না। একজন শিক্ষিত মানুষ যদি না খেতে পায়, কাজ নাও পায় তবুও সে তারকার মত আলোকিত। তাকে দূর থেকে চেনা যায়। একজন বর্বর যদি টাকার প্রাসাদেও বাস করে, ভোগের স্বর্গরাজ্য লাভ করে তবুও তাকে চেনা যায় কেননা সে ইতর! শিক্ষা না থাকলে মানুষ বদলায় না। প্রকৃত শিক্ষা ভিন্ন ব্যাপার! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ক্লাসও মানুষকে শিক্ষিত করতে পারে না যদি না সে মানুষ হওয়ার শিক্ষা পায়!

আয়-রোজগারের পরিমাণের কম/বেশির সাথে শিক্ষার/শিক্ষিতের তুলনা চলে না। কার আয় বেশি এটা দিয়ে মেপে বর্বর এবং সভ্যের পাল্লা সমান হয় না। দুর্নীতিবাজ এবং সৎলোকের সম্মান এক করা যায় না! যে একটু বেশি পড়েছে, যে একটু বেশি জেনেছে তার আলোর সাথে দূরের অন্ধকারের তুলনা করা বোকামি! অর্থই জীবনের পরমার্থ নয়! ইনকাম মনুষ্যত্ব পরিমাপের মানদন্ড নয়। বইয়ের ওজন আছে, জ্ঞানের কদর আছে। শিক্ষাহীন অর্থ বিপজ্জনক! এটা বিধ্বংসী কর্মকান্ড ঘটাতে পারে। রটাতে পারে অহংকার। জ্ঞানীজন দীন হলেও পূজনীয়। অবিদ্বান অর্থবান হলেও বর্জনীয়।

আয় দিয়ে মানুষ মাপা বোকামি। শিক্ষা মানুষকে সভ্য আচরণ শেখায়। ভদ্র করে। মার্জিত রুচির অধিকারী বানায়। বইয়ের সঙ্গ মানুষকে বিনয় শেখায়। কে কীভাবে কত আয় করে?-এ বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক! কে কীভাবে, কোনপথে খরচ করে, কতটুকু বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে ব্যয় করতে পারে সেটাই তার পরিচয় বহন করে। শিক্ষা-অশিক্ষার ভেদ তুলে ধরে! মানুষকে আরও বড় আলোকবর্তিকায় পরিণত করে। শিক্ষার বিচার অশিক্ষিতদের হাতে তুলে দিলেই তারা আয় দেখে মানুষের বিচার করবে-এ আর এমন বিস্ময়কর কী! সওদাগরদের কলমে যে জাতির ভাগ্য সেখানে আর হারানোর থাকে কী!

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution