বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৩ অপরাহ্ন

রাবি শিক্ষার্থী লিপু হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় পরিবার ও সহপাঠীরা

আবু বকর অন্তু, রাবি থেকে॥ তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনে মামলা এখন সিআইডিতে। এসবের মধ্যদিয়ে দুই বছর পেরিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী লিপু হত্যাকান্ডের। তবে এই দীর্ঘ সময় পার হলেও রহস্য উদঘাটন হয়নি সেই হত্যার। প্রাথমিকভাবে হত্যাকান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও কে বা কারা হত্যা করলো, কেন করলো, কারাই বা এর পিছনে রয়েছে তার কিছুই জানাতে পারেনি পুলিশ। আদৌ সেই হত্যাকান্ডের বিচার পাবে কিনা? এ নিয়ে আশংকা এবং হতাশা বিরাজ করছে পরিবার, সহপাঠী ও বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। তারা এ মামলার তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

লিপুর বাবা বদরউদ্দীন বলেন, “এক বছর আগে ফোন দিয়েছিলাম এক পুলিশকে। তিনি বললেন, আমার কাছে এ মামলা নাই। তারপরে আর কোনো খোঁজ নেইনি। বুঝ না, এখন বিচার পাইতে হলে টাকা লাগে। আমার বাবা জানো তো, টাকা নাই। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখছি। তিনিই এর বিচার করবেন। আমার ছেলের নামে কোনো খারাপ রির্পোট ছিলো না। আমি তো আর কিছু জানতে চাইনি। আমি শুধু জানতে চেয়েছি, তারা আমার বাবারে কেনো মারলো?”

জানা যায়, প্রথমে লিপু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) অশোক চৌহান। মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, মামলার তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে, অল্পদিনের মধ্যে দোষীদের শনাক্ত করা যাবে। এর মধ্যে ওই বছরের ডিসেম্বরে অশোক চৌহান বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে মামলার দায়িত্ব পান মতিহার থানার নতুন ওসি (তদন্ত) মাহবুব আলম। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তরের আদেশ আসে।

সিআইডিতে মামলাটির দায়িত্ব পান রাজশাহী সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আসমাউল হক। তিনি পৌনে দুই বছর ধরে এই মামলার তদন্ত করলেও মামলাটির সম্পর্কে কোন অগ্রগতি জানাতে পারেননি। গত বছরের এইদিনে বলেছিলেন, ‘লিপু হত্যার তদন্তে এখনো কোন অগ্রগতি নেই। আসামি সনাক্তে কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। আমরা তদন্ত করছি। একটু সময় লাগবে।’

তবে দুই বছরের মাথায় তিনি বলেন, “আমি তো ওখান থেকে বদলি হয়েছি। এ সংক্রান্ত আমার কোনো বক্তব্য নেই। এখন যে নতুন দায়িত্বে আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি তো ওই দায়িত্ব দিয়ে চলে আসছি। আমি সেটা সিআইডি অফিসে দিয়ে এসেছি।”

এক সপ্তাহ আগে লিপু হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া আজিজুর রহমান (ইন্সপেক্টর) বলেন, “আমি সপ্তাহখানেক হলো এ মামলার দায়িত্ব পেয়েছি। এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তবে মামলার তদন্ত চলছে।”

এদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, ‘আমাদের মন ভার হয়ে আছে। দুই বছর পার হয়ে গেল! এখানে যারা দাঁড়িয়েছি তারা লিপুর সহপাঠী। তারা দেখেছে হলে লিপুর লাশ পড়ে আছে, লাশের গায়ে ক্ষত চিহ্ন আছে। যখন লাশে ক্ষত চিহ্ন থাকে তখন এটা কিলিং। এটা কোন সুইসাইডাল এ্যাটেম্পট না। এটা মার্ডার, যখন জানি এটা মার্ডার তার তদন্তে কেন দুই বছর লাগবে? এটা বড় প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম প্রশ্ন অনেক, অনেক ছাত্র-শিক্ষক মারা গেছে কিন্তু বিচার হয় না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর কতদিন? বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন? আমাদেরকে কেন এই চর্চা চালিয়ে যেতে হবে?

শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেই মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।

লিপুর সহপাঠী হুসাইন মিঠু বলেন, ‘এই মামলার তদন্তে আমরা পুলিশের অনীহা লক্ষ করেছি। পুলিশ চাইলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই এর প্রতিবেদন দিতে পারতো। পরবর্তীতে সিআইডিতে মামলাটি গেলে তারাও পুলিশের মতোই এ মামলাটি নিয়ে অবহেলা করেছে। তারা আমাদেরকে হতাশ করেছে গত দুই বছর ধরে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে লিপুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লিপুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ওই সময় পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওইদিন বিকেলে লিপুর চাচা মো. বশীর বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com