মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন
মোঃ বিপ্লব, রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:: ঠাকুরগাঁওয়ের উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে রাণীশংকৈল উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নাম সরকারি, কাজ যেন ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া। এখানেই চিকিৎসা নিতে আসে দুই উপজেলার প্রায় দুই লক্ষ মানুষ। বেডে জায়গা না পেয়ে কেউ ফ্লোরে, কেউ করিডরের কোনায় অথচ হাসপাতালের খাবার থেকে চিকিৎসা, এমনকি ওয়াশরুম পর্যন্ত যেন অনিয়মের দুর্গন্ধে ভরে আছে চারপাশ।
গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই হাসপাতালেই অভিযান চালায় দুদক ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড, ল্যাব, খাবার সরবরাহ ব্যবস্থা সবকিছু ঘুরে দেখে বেরিয়ে আসে একের পর এক অসঙ্গতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র।
রোগীরা অভিযোগ করেন, নিয়মিত ওষুধের সরবরাহ নেই, ডেন্টাল সার্জন নাকি মাসে এক-দু’দিনই দেখা দেন, আর জরুরি বিভাগে সেবার চেয়ে হয়রানিই বেশি। খাবারে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে সরাব কণ্ঠে। কেউ কেউ বলেন, চিকিৎসা নিতে এসে মনে হয় যেন রোগ বাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
তদন্তে উঠে আসে আরও ভয়াবহ তথ্য
হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ানরাই নাকি বাইরে গড়ে ওঠা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল! রোগীদের নিজেদের ল্যাবে না এনে বাইরে পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়, যেখানে লুকিয়ে আছে মোটা কমিশনের খেলা। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিজস্ব ল্যাবেই রয়েছে প্রায় সব পরীক্ষার সুযোগ।
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, কমিশনের অনুমোদনক্রমে এই অভিযান চালানো হয়েছে। রোগীদের নিম্নমানের খাবার, নোংরা পরিবেশ, চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতা ও বাহিরের ডায়াগনস্টিক বাণিজ্য সবকিছুই নজরে এসেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জড়িতদের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ চৌধুরীও লজ্জিত স্বরে স্বীকার করেন নিজের ব্যর্থতা। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, স্টাফরা আমার কথা শোনে না। ম্যানেজমেন্টে সমস্যা আছে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
রাণীশংকৈলবাসীর প্রত্যাশা এই অভিযান যেন কেবল একদিনের হৈচৈ না হয়ে ওঠে পরিবর্তনের সূচনা। কারণ হাসপাতাল মানে শুধু ভবন নয়, সেটি এক আশ্রয় যেখানে মানুষ শেষ ভরসা খোঁজে জীবনের।