মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৩ অপরাহ্ন
আলমগীর হোসেন শিশির সাহিত্য প্রতিবেদন : সামনে ঈদুল আযহা। একখানা জামদানী শাড়ি কিনে বাসার পথে ফিরছে আলী আলম। মায়ের কথা গুলো আজ তার ভীষণ মনে পড়ছে। তারা কয়েকজন ভাই বোন, তাদেরকে মানুষ করতে গিয়ে তাদের মা অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। মাকে সে কোনদিন ভালো শাড়ী পরতে দেখেনি। আলী আলম কয়েক মাস ধরে টাকা জমিয়ে মায়ের পছন্দের একটি জামদানী শাড়ি ক্রয় করে মনে একটা অন্য রকম শান্তি অনুভব করছে। মা নিশ্চয় অনেক খুশি হবে। আচ্ছা মা যখন শাড়ী পরে মুখে একটা মিষ্টি হাসি দিবে, তখন মাকে কেমন দেখাবে? এই রকম হাজারো গল্প আমাদের চোখের সামনে প্রতি নিয়ত ঘটে চলেছে।
মা। ছোট্ট একটা শব্দ। এই ছোট্ট শব্দটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বস্থ শব্দের একটি। ছোট্ট শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পরেই তার মা হয়ে যায় তার সমস্ত পৃথিবী। মায়েদের কোন জাত-ধর্ম, শ্রেণী বিভেদ নেই। মা তো মা। সৃষ্টিকর্তার পরে মানুষের নির্ভর যোগ্য কোন শান্তির জায়গা যদি থেকে থাকে সেটি হচ্ছে মায়ের আঁচল। বাবার থেকে মায়ের গুরুত্ব সন্তানের কাছে সবচেয়ে বেশি। মা হয় সন্তানের প্রথম পৃথিবী, প্রথম শিক্ষক। মায়ের কোলে বসেই সন্তান বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন বুনে থাকে।
ইসলাম ধর্ম মায়ের যে সম্মান দিয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম কল্পনাও করেনি। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বলেন, মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, তোমার বাবা। (বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং ইসলাম ধর্ম পৃথিবীর সব থেকে বেশি সম্মান মাকেই দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪২১) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, মহান আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজ্বের সাওয়াব দান করেন। (বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪২১) সুতরাং মায়ের সম্মান আকাশসম।
কোন সন্তান যদি নিজের জীবনের উপার্জিত কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনা শর্তে দান করে দেয়। সে যদি শতবার পবিত্র হজ্ব পালন করে এবং সমাজের সকল ধরণের কল্যাণকর কাজের সাথে নিজেকে উৎসর্গ করে থাকে। তবুও সে জান্নাতের সু-ঘ্রাণ পাবেনা। যদি তার মা তার প্রতি সুন্তুষ্ট না থাকে। মায়ের প্রতি উত্তম ব্যবহার ছাড়া সন্তানের জীবনের সকল কৃতিত্ব বৃথা। মায়ের প্রতি সেবা করার মাধ্যমেই একজন সন্তান প্রকৃত মানুষ হবার সুখ অনুভব করতে পারে।

মায়ের সম্মান ছিল, আছে এবং থাকবে
কোনো ব্যক্তি মাকে পিঠে বহন করে হজ্ব সম্পাদন করালেও তার ঋণ আদায় হবে না। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে অভিযোগ করল যে, তার মা বদমেজাজের। রাসূল (সা.) বললেন, নয় মাস পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যখন তিনি পেটে ধারণ করে ঘুরেছে তখন তো তিনি বদমেজাজের ছিলেন না। লোকটি বলল, হুজুর আমি সত্যই বলছি, তিনি খারাপ মেজাজের। হুজুর (সা.) বললেন, তোমার জন্য যখন তিনি রাতের পর রাত জাগ্রত থেকেছেন এবং তোমাকে দুধ পান করিয়েছেন, তখন তিনি তো বদমেজাজের ছিলেন না। সে ব্যক্তি বলল, আমি আমার মায়ের প্রতিদান দিয়ে ফেলেছি। রাসূল (সা.) বললেন, সত্যিই কি তার প্রতিদান দিয়ে ফেলেছো? জবাবে লোকটি বলল, আমি আমার মাকে কাঁধে চড়িয়ে হজ্ব করিয়েছি। তখন রাসূল (সা.) এবার সিদ্ধান্তকারী রায় দিয়ে বললেন, ‘তুমি কি তার সে কষ্টের বদলা বা প্রতিদান দিতে পার যা তোমার ভূমিষ্ট হওয়ার সময় তিনি স্বীকার করেছেন? অর্থাৎ মাকে পিঠে করে হজ্ব সম্পাদন করালেও ভূমিষ্ট হওয়ার সময়ে তার যে কষ্ট হয়েছে সেটার নূন্যতম বদলা হবে না ।
পৃথিবীর এলোমেলো ঘটনাকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন তারিখে মাতৃ দিবস পালন করলেও সেই ঘটনা ইসলামের বিভিন্ন ঘটনার ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনা। নারীবাদিরা যতই ¯েøাগন দিক না কেন, ইসলামই একমাত্র তাদের দিয়েছে প্রকৃত সম্মান।
কোথা থেকে এলো মাতৃ দিবস ?
বিভিন্ন দেশে নানা সময়ে মাতৃ দিবস পালন শুরু হয় বলে জানাচ্ছে ইতিহাস। নানা দেশের পুরাণেও এর উল্লেখ রয়েছে বলে জানা যায়। তবে মাতৃ দিবসের আধুনিক উদ্যাপনটি ১৯০০ সাল নাগাদ শুরু হয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে। আনা জার্ভিস নামে এক আমেরিকান মহিলা তাঁর প্রায়াত মায়ের সম্মানে গির্জায় উপাসনার আয়োজন করেন। সেই থেকেই নাকি শুরু হয় এই দিনটি পালনের। পরে ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই দিনটিকে জাতীয় ছুটি হিসাবে ঘোষণা করেন। সময়ের সঙ্গে দিনটির কিছু বাণিজ্যিকীকরণও হতে শুরু করে। শোনা যায়, পরে আনা জার্ভিসই নাকি এই দিনে মাতৃ দিবস পালন করার বিরোধিতা করতে শুরু করেন। কারণ তাঁর দাবি ছিল, দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে গিয়েছে। (সূত্র গুগোল)
মাকে ভালোবাসতে কোন দিবসের প্রয়োজন নেই। আমরা মাকে ভালোবাসবো সবদিন সব সময়। মায়ের মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীর আলো-বাতাস চোখে দেখেছি। মায়ের মুখের ভাষাতেই আমরা কথা বলি। মা ছাড়া আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই। সুতরাং একজন আদর্শবান মানুষ তার মাকে ভালোবাসতে, ভোরণ-পোষণ দিতে বাধ্য। কোন দিবসের চক্করে পড়ে আমারা মায়ের মর্যাদা ছোট করতে চাইনা। মায়ের সম্মান ছিল, আছে এবং থাকবে।

ছবি: শিশির
=০=