সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

ন্যায্য মজুরি চান নারী শ্রমিকরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে শ্রমিক সংকটে নারী শ্রমিকেরা আমনের কাটা মাড়াইয়ের কাজ করছেন। ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। পুরুষ শ্রমিকদের মত সারাদিন কাজ করার পরেও তাদের মজুরি কম দেয়া হচ্ছে। এদিকে এবার ধানের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে দাম ভালো থাকায় খুশি আমন চাষিরা। আগাম জাতের ধান কাটা শেষ করে আবার সেই জমি প্রস্তুত করে সেখানে আলু ও সরিষা চাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন অনেক কৃষক।

ইতোমধ্যে অনেকেই আলু চাষের জন্য জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করতেও শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১টি পৌরসভা ১৩ টি ইউনিয়নসহ আমন ধানের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৪ হাজার ৫’শ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে ২৪ হাজার ৪’শ ৫০ হেক্টর। আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ লক্ষ্য ৩ হাজার ৬’শ ৬৮ মেট্রিক টন।

এবারে আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। তারা আরও জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাঠপর্যায়ে আমন চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ফলে আমনের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেটে রাখা সোনালি রঙের ধান। ধান কেটে আঁটি বেঁধে সপ্তাহখানেক খোলা মাঠে ফেলে রেখেছেন কৃষকেরা। পরে কৃষকেরা ধানের সঙ্গে খড় শুকিয়ে তা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে আমনের কাটা মাড়াই একই সঙ্গে শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকটে নারী শ্রমিকদের দিয়ে আমনের কাটা মাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। নারী শ্রমিকেদের মজুরি দেয়া হচ্ছে পুরুষ শ্রমিকের মজুরির অর্ধেক।

তাতে করে নারী শ্রমিকদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ অসন্তোষ। নারী শ্রমিকেরা জানান, আমরা পুরুষ শ্রমিকদের মত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমনের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতেছি। আমাদের মজুরি দেয় তাদের মজুরির অর্ধেক। আমরা অবহেলিত অসহায় হওয়ায় আমাদের দেখার কেউ নেই। আমরা গরীব অসহায় হওয়ায় আমাদের মাঠে কাজ করতে হচ্ছে। সারাদিন কাজ করে যদি আমরা সাংসার চালাতে না পারি তাহলে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকব। তারা বলেন, অবশ্যই আমদের ন্যায্য অধিকার থেকে কেউ তাদের বঞ্চিত করবেনা বলে আশা করেন তারা।

উপজেলার কিশামত মালতীবাড়ি এলাকার নারী শ্রমিক রোকেয়া বেগম (৫০) বলেন, নারী শ্রমিকেরা সারাদিন আমনের কাটা মাড়াইয়ের কাজ করে মজুরি দেয় মাত্র ৩০০ টাকা। একজন পুরুষ শ্রমিককে মজুরি দেয়া হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আমাদের মজুরি দিয়ে সাংসার চালানো সম্ভব নয়। বর্তমান বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বগতি মূল্যে ৩’শ টাকা দিয়ে কিছুই হয়না। আমরা নারী শ্রমিকেরা দাবী জানাই মজুরিতে বৈষম্য না রেখে যেন সমান মজুরি দেয়া হয়। আমরাও সমাজে সম্মানের সাথে জীবিকা নির্বাহ করে বাঁচতে চাই।

এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার নারী শ্রমিকদের মধ্যে রহিমা বেগম (৪০), বানেছা বেগম (৩৫) ও মোর্শেদা বেগম (৪০) সহ আরও অনেকে একই কথা বলেন। উপজেলার হায়াৎখাঁ এলাকার আমন চাষি ছামছুল হক জানান, প্রায় ২ একর জমিতে আমনের চাষ করেছেন। ধান ঘরে উঠানো পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ধানের আশা করছেন প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ মণ। যার বর্তমান বাজারদরে হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। মাড়াই করার জন্য শ্রমিক সংকট হওয়ায় নারী শ্রমিক নিতে হয়েছে। এছাড়া নারী শ্রমিকের মজুরিও কম।

নারী শ্রমিকদের মজুরির ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে নারী শ্রমিকদের মজুরি একটু কম। এ অল্প মজুরিতে তাদের সাংসার চালানো সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের সমাজের বিত্তবানদের নারী শ্রমিকদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হওয়া জরুরি। যাতে তারা ন্যায্য মজুরি পান।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা খাতুন নারী শ্রমিকের ব্যাপারে জানান, বর্তমান বাজারে নারী শ্রমিকেরা অবহেলিত। তাদের কেউ ন্যায্য মজুরি দিতে চাননা। তারাও তো পুরুষ শ্রমিকদের মত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। তাদেরকে কেন অর্ধেক মজুরি দেয়া হয়। তিনি মনে করেন এমন বৈষম্য থেকে আমাদেরকে বেড় হয়ে আসতে হবে। তারাও তো মানুষ। তারা কাজ করে বেঁচে থাকতে চায়। এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে যেন তারা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত না হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com