বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১০:২৩ অপরাহ্ন

চিরিরবন্দরে ঈদে গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

দেলোয়ার হোসেন বাদশা, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের বাকালীপাড়া গ্রামের গো- খামারি মো. আলম হোসেন শতাধিকেরও বেশী গরু এবার কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য মোটাতাজা করেছেন। কিন্তু ঈদের আগেই সর্বাত্মক লকডাউনে ভেঙে গেছে সেই আশা। বেশি দাম পাওয়া দূরে থাক, সবগুলো গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, সেই শঙ্কায় আছেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত বেশী সময় খামারে গরু থাকলে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। শুধু আলম নন, দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁর মতো আরও অনেক খামারি। সবার আশঙ্কা, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মানুষ এবারও পশু কোরবানি কম দেবে। এতে হাটে পশু বিক্রিও কম হবে, যার প্রভাব পড়বে গরুর দামে। কথা হয় গো-খামারী আলমের সাথে।

চিন্তিত এই খামারি বলেন, ‘পালন করা গরুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। গরুকে প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি কুঁড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। এতে একটি গরুর পেছনে দিনে খরচ পড়ে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এরই মধ্যে মোট ১০০টি গরুর পেছনে প্রায় ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। দাম না পেলে বড় লোকসান হবে। আর যদি এবার বিক্রি না হয়, তাহলে প্রতিদিন যে খরচ হয় তাতে সীমাহীন ক্ষতির সন্মুখীন হতে হবে।

গরু খামারীরা আরো বলছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরু মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার আগ্রহী কোনো ব্যাপারীর দেখা নেই। এ ছাড়া কোরবানির আগমুহূর্তে জমজমাট হাট বসার সম্ভাবনাও নেই বললেও চলে। এ কারণে গরু বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। ঈদে পশু বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও খরচ কিন্তু থেমে নেই খামারিদের। বেড়েই চলেছে পশুখাদ্যের এই খরচ।

আব্দুলপুর ইউনিয়নের গো-খামারী শাহীনুর ইসলাম বলেন, ছয় মাস আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৪২০ টাকা। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি, করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪২ টাকা দরে। শুধু গমের ভুসি ও খৈল না, সব রকম গোখাদ্যের দাম গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। গরু খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ার আশঙ্কায় ও হতাশায় রয়েছি। চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের কোরবানির জন্য চিরিরবন্দরে ২১ হাজার ২৫২টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ১২ হাজার ৯২৯টি ছাগল ৮ হাজার ৮১টি এবং ভেড়া ২৪২টি। ঈদের আর মাত্র ১৫-১৬ দিন বাকি। ব্যবসা করতে না পারায় আক্ষেপ আছে ব্যাপারীদের মধ্যেও।

আরেক গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সারা বছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সব থেকে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই মাস ধরে নিয়মিত হাট বসতে পারছে না। আর কোরবানির আগমুহূর্তে হাট বসার সম্ভাবনা খুবই কম।

চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা সরফরাজ হোসেন বলেন, এবারের ঈদে চিরিরবন্দর উপজেলায় ২১ হাজার ২৫২টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে গরু বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। আমরা গো-খামারিদের করোনা ভাইরাসের কারনে ও সর্বাত্মক লকডাউন থাকায় অনলাইনে গরু বেচা-কেনার জন্য ক্রতা-বিক্রেতাদের উদ্ধুদ্ধ করে যাচ্ছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com