রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন
গাজীপুর সাংবাদতা ॥
সাংবাদিকদের জন্য সপ্তাহে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণের জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। একই সাথে নবম ওয়েজ বোর্ড অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনসহ মোট ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে সংগঠনটি।
শনিবার (০৪ অক্টোবর) সকালে গাজীপুরে অনুষ্ঠিত বিএফইউজে’র কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই দাবি জানানো হয়। সভায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ছুটির দাবি কেন?
সভায় বলা হয়, বর্তমানে সরকারি ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা সপ্তাহে দুই দিন ছুটি উপভোগ করেন। কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকায় এবং সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনের ছুটিও না পাওয়ায় সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ দিন দিন বাড়ছে। এই চাপ কমাতে এবং সাংবাদিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি অপরিহার্য।
ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের তাগিদ:
দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও কার্যত তা হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাংবাদিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে, দ্রুত নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড গঠন করে দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আইনি সুরক্ষার দাবি ও কালো আইন বাতিলের সমালোচনা:
সভায় সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধকারী ‘নিপীড়নমূলক আইন’ নিয়ে কড়া সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যেমন স্থলমাইন ব্যবহার করা হয়, তেমনি সাংবাদিকদের দমনে অন্তত ২০ থেকে ৩২টি নিপীড়নমূলক আইন ছড়িয়ে আছে। এই “কালো আইনের” ফাঁদে পড়ার ভয়ে অনেক সাংবাদিক সেলফ সেন্সরশিপ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী এসব আইন দ্রুত চিহ্নিত করে বাতিল করার দাবি জানানো হয়।
চাকরি ও পেশাগত সুরক্ষার গুরুত্ব:
সাংবাদিকদের আইনি সুরক্ষার পাশাপাশি চাকরি ক্ষেত্রে সুরক্ষা নিশ্চিত করাকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে বিএফইউজে। অধিকাংশ গণমাধ্যম সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন দেয় না, নিয়োগপত্র ছাড়াই কাজ করায়, যখন তখন চাকরিচ্যুত করে এবং ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন দেয় না। বিশেষত মফস্বল এলাকার সাংবাদিকদের বেতন নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। কোনো কোনো টিভি চ্যানেল উল্টো জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে টাকাও চায়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
এছাড়াও, পেশাগত দায়িত্বপালনকালে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি (ক্যামেরা, ল্যাপটপ, গাড়ি ইত্যাদি) নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ, শারীরিক ক্ষতির জন্য দুর্ঘটনা বিমা ও চিকিৎসা বিমা, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে। নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও আলাদা রেস্টরুম রাখার বিষয়টিও প্রস্তাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন-এর সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় অন্যদের মধ্যে সহসভাপতি মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, একেএম মোহসীন, সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন ও এহতেশামুল হক শাওন, কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
১০ দফা দাবির মূল বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন নির্ধারণ।
২. নবম ওয়েজ বোর্ড অবিলম্বে বাস্তবায়ন।
৩. দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন।
৪. সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড।
৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী নিপীড়নমূলক আইন বাতিল।
৬. চাকরি ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আইনি ও আর্থিক সুরক্ষার ব্যবস্থা।
৭. নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও আলাদা রেস্টরুম।
৮. পেশাগত দায়িত্বপালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি ও শারীরিক ক্ষতির ক্ষতিপূরণ ও বিমা।
৯. সংবাদকর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা ভাতা, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা।
১০. সংবাদ কর্মীদের আইনি সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা ব্যবস্থা।