শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
মোঃ বিপ্লব, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: সদ্য পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া এক নিঃপাপ সন্তাকে অভাবের তাড়নায় দত্তক দিতে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। চাঞ্চ্যলকর এ ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় বাচোর ইউনিয়নের পর্ব বাচোর গ্রামের একটি অসহায় হিন্দু পরিবারে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ক্রিয়েশন অফ হিমালয় নামে এক ফেসবুক পেইজে দত্তক বিজ্ঞপ্তিটি ভাইরাল হয়।
ফেসবুকে প্রোফাইলে তিনি বলেন বাচোর ইউনিয়নের এক সনাতনী গরীব পিতার নবজাতক কন্যা সন্তানকে সুষ্ট ভবিষ্যৎ ভালোবাসা ও নিরাপদ পরিবেশের লক্ষ্যে আইনগতভাবে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগ্রহীদের যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন। ভাইরাল হওয়া পোষ্টের সূত্র ধরে এ প্রতিবেদকের যাওয়া হয় বাচোর গ্রামে ভূমিহীন শুক্রু বম্র্মনের বাড়িতে, সেখানে দেখা হয় নবজাতকের মা বাক্ প্রতিবন্ধি শেফালী রাণী ও বাবা শুক্র বর্ম্মণ এর সাথে। এরপর জানা যায়, ওই দম্পত্তির আগে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে যাদের বয়স একজনের ৬ বছর অন্য জনের সাড়ে ৩ বছর। এরপর আবারো ফুটফুটে এক নবজাতক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে সেই পরিবারে। এই পরিবারটি একেইত ভূমিহীন তারপরেও তিন কন্যাসন্তান এদের নিয়ে সংসারের ব্যায়ভার চালানো অসম্ভব মনে করেন তাদের পিতা।
শুক্রু বর্ম্মণ কান্না জনিত কন্ঠে বলেন, আমি আমার শশুর বাড়িতে এক কোণে একটি খড়কুটো দিয়ে ঘর বানিয়ে কোন রকম দিন পার করি। আমিও অসুস্থ মানুষ অন্যোর বাড়িতে কাজ করি তাও প্রতিদিন কাজে যেতে পারি না। সেজন্য বাচ্চাদের ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করাতে কস্ট হয় খুব। সদ্য নবজাতকের মায়ের সিজারিয়ান করে বাচ্চা প্রসব করা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকাও আমি অন্য মানুষের কাছে ধারদেনা করেছি। আমার কাছে কোন টাকা নেই ঠিকমতো ওষুধ কিনতে পারছি না। আমার বউ ঠিক মতো কথা বলতে পারেনা প্রায় বাকপ্রতিবন্ধির মতো। তাই আমি বউয়ের সাধে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের ৭ দিনের সন্তানকে কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভালো পরিবারের লোকের কাছে দত্তক দিয়ে দিবো। যেন আমার সন্তানটি মানুষের মত মানুষ হতে পারে। সেজন্য আমি বাড়ির পাশের স্কুলের মাস্টার অনেস দাদাকে বলেছিলাম। তিনি আরো বলেন, তবে যদি কোন বৃত্তবান বা সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে এ নবজাতককে রেখেই দিবো বাড়িতে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অনেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমি স্কুলে ছিলাম তখন শুক্রু বর্ম্মণ আমার কাছে গিয়ে ৭ দিনের শিশুকে দত্তক দেওয়া কথা বলে। পরে আমি আমার পরিচিত একজনকে ফেসবুকে পোস্ট দিতে বলি। তবে সরকার সহ স্থানীয় বৃত্তবান মানুষগুলো যদি অসহায় এ পরিবারটির পাশে দাঁড়ায় তাহলে সন্তানটিকে বাড়িতেই রাখা সম্ভব।
রাণীশংকৈল উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুর রহিম মুঠোফোনে জানান, কোন শিশুকে যদি লালন পালন করতে সমস্যা হয় তবে সরকারি শিশু পরিবার আছে এবং ছোট মনি নির্বাস আছে সেখানে সব কিছুই সরকারি খরচে লালন পালন করা হবে।