মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
মোঃ বিপ্লব, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: আমার বাড়ির কাজের লোক যখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক! সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই বিখ্যাত মন্তব্য যেন হুবহু মিলে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার এক দিনমজুরের গল্পে। উপজেলা কৃষি অফিসে দিনমজুরি করা শামসুল হক এখন এলাকায় পরিচিত “কৃষি অফিসার” নামে। কৃষি অফিসে দৈনিক ৫০০ টাকায় শ্রম বিক্রি করেও তাঁর এখন অঢেল সম্পদ, রয়েছে সোলার পাম্প ও ১৯টি কৃষিযন্ত্র!
দিনমজুরি থেকে যন্ত্রের মালিক
জানা গেছে, উপজেলার হোসনেগাঁও ইউনিয়নের ভুকুরগাঁও উজধারী গ্রামের আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে শামসুল হক প্রায় সাত বছর ধরে উপজেলা কৃষি অফিসে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু তাঁর মালিকানায় এখন রয়েছে ১টি সোলার সেচপাম্প, ১২টি ধান রোপণ মেশিন, ৩টি ধান কাটার মেশিন, ৩টি সরিষা মাড়াই মেশিন এবং কেঁচো সার উৎপাদনের ১টি মেশিন— মোট ১৯টি কৃষিযন্ত্র।
স্থানীয়রা বলছেন, দিনমজুর হয়েও শামসুল এখন তিন ভাইয়ের তিনটি পাকা বাড়ির মালিক।
হোসনেগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মির্জা মিঠু বলেন, সে কৃষি অফিসে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে, অথচ এখন তার হাতে কোটি টাকার সম্পদ। এলাকায় সবাই তাকে কৃষি অফিসার হিসেবেই চেনে।

‘কৃষি অফিস থেকে এনেছে মেশিন’
শামসুল হকের মা আনজুয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে কৃষি অফিসে চাকরি করে, ওখান থেকেই এসব মেশিন এনেছে। আগে আমাদের অবস্থা ভালো ছিল না, এখন আল্লাহর রহমতে সাত বিঘা জমি হয়েছে।
শামসুল হক নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি কৃষি অফিসে দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। নিজের জমি না থাকলেও মেশিনগুলো বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের ভাড়ায় দিই। সরকারি প্রণোদনাও কখনও কখনও পাই— এপ্রিল মাসে ভাইয়ের নামে বেগুনের প্রকল্প নিয়েছিলাম, এবার সরিষা ও গমের জন্য আবেদন করেছি।”
অফিসের আশ্রয়েই ‘উন্নতি’?
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, শামসুল হক আগে থেকেই দিনমজুর হিসেবে অফিসে কাজ করতেন। তাঁর এলাকায় ‘সবজি কৃষক ফসল’ নামে একটি গ্রুপ আছে, সেই গ্রুপের মেশিনগুলোই তাঁর বাসায় রাখা হয়।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষি অফিসের ছত্রছায়া ছাড়া একজন দিনমজুরের পক্ষে এমন বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া প্রশ্নবিদ্ধ।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত দাবি করেছেন সচেতন মহল দিনমজুর থেকে ‘অফিসার’রাণীশংকৈলের এই গল্প এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
সরকারি প্রণোদনার প্রকৃত উপকারভোগীরা কোথা সেটিই এখন প্রশ্ন স্থানীয়দের মুখে।