রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

নড়াইলে পিআইও অফিসের কোটিপতি কেরানি আজও বহাল তবিয়তে

নড়াইল প্রতিনিধি::

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অফিসের অফিস সহকারী মো. মনিরুজ্জামান মুকুল এর নামে দূর্নীতির নিউজ বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও পোর্টালে ছাপা হওয়ার পর এলাকার সর্বস্তরের জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তারতা নড়ে চড়ে বসলেও মনিরুজ্জামান মুকুল আজও আছে বহাল তবিয়তে। তার বিরুদ্ধে আরোও অনেক অবৈধ সম্পদের সন্ধান মিলেছে।

এদিকে, নড়াইল-২ আসনের এমপিমাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ডিও লেটার ১৩দিন অতিবাহিত হলেও তার কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। অপর দিকে, বহাল তবিতে রয়েছেন পিআইও অফিসের অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান মুকুল। অফিসের বস থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের ও পাত্তানা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অফিস সহকারীর খুঁটির জোর কোথায় এমন প্রশ্নঘুর পাকখাচ্ছে নড়াইলের অলিতে-গলিতে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উক্ত কোটিপতি অফিস সহকারী মনিরুজ্জামানের দ্রুত বদলীসহ অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়ে দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে ডিও লেটার প্রদান করেছেন ৯৪, নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। তিনি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অধিদপ্তরে প্রেরিত তদান্তাধীন বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ লোহাগড়া উপজেলা পিআইও, ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশের কথাও উলে¬খ করেছেন তাঁর ডিও’তে। অপরদিকে, গত ১৬ আগস্ট তার (মুকুল) বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় নড়াইলের জনৈক ব্যবসায়ী মিলন খান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের কারণে ৫১.০১.০০০০.০০৪.১৮.৪০১.৪৮৩ নং স্মরকে ৬ সেপ্টেম্বর যার তদন্ত প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মহাখালী ঢাকার উপপরিচালক (প্রশাসন-২) ড. হাবিব উল্লাহ বাহার জেলা প্রশাসক, নড়াইলকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই দপ্তরে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ওই তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

মিলন খানের লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারো নলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. মকসেদ মোল্যার ছেলে মো. মনিরুজ্জামান মুকুল পিআইও অফিসের ১৫ হাজার ৯৬০টাকা বেতনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তিনি গত ১০বছরে বরগুনা, মাগুরা, নড়াইল সদর ও লোহাগড়া পিআইও অফিসে চাকুরী করেছে। বর্তমানে লোহাগড়া পিআইও অফিসে তিনি একাই একশ। কাউকে তোয়াক্কা না করে দুই হাতে অবৈধ পন্থায় কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা। অফিস সহকারীরর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় অবৈধ লেন-দেনের বিনিময়ে অর্জিত টাকা দিয়ে লোহাগড়া পৌরশহরের মদিনা পাড়ায় ৮ শতক জায়গার ওপর কোটি টাকায় বিলাস বহুল একটি দ্বিতল আলিশান ভবন নির্মাণ করেছেন। এছাড়া মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি এগারো নলীতে আরো একটি দ্বিতল বাড়ি নিমার্ণ করেছেন। পাশাপাশি তার নিজ নামে মাগুরা পৌর শহরের পার নান্দুয়লী গ্রামে ৭ শতক দামি জমি, বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের পাশে এক খন্ড জমি, লাহুড়িয়া বাজারে ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি দোকান, লাহুড়িয়া মৌজায় ২৪ শতক করে দু’টি জমি, এগারোনলীতে আরো ৩০ শতক জমিসহ বিঘায় বিঘায় সম্পত্তি ক্রয় করেছে। এ ছাড়া নামে-বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে, রয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্সও। তার টাকায় দুই সহোদর ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে।

তিনি অনৈতিক ভাবে তার মালিকানাধীন দু’টি বিলাস বহুল বাড়িতে দুটি ৭৫ হাজার টাকা মূল্যেও সরকারি স্ট্রিট লাইট ও একটি লক্ষাধিক টাকা মূল্যেও এসিডিসি বসিয়েছেন। মদিনাপাড়ায় দ্বিতলা ভবন নির্মাণে নেই অনুমোদন। বাড়িতে পৌরসভার হোল্ডিং নাম্বর প্লেটও নেই। দেননা পৌর ট্যাক্সও। সম্প্রতি উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের কলাগাছি গ্রামের সমির ঘোষের বাড়ির সামনে রাস্তায় একটি স্টিট লাইট বসানো কথা থাকলেও কেরানি মুকুল সমির ঘোষের কাছ থেকে অনৈতক সুবিধা নিয়ে তার বাড়িতে বসানোর অনুমতি দেয়। কাশিপুর ইউনিয়নের রায়গ্রামের ব্যবসায়ী সাবু সরদার বলেন, ‘মনির একজন চরম দূর্নীতিবাজ ও ঘুষ খোর লোক, তিনি সুবিধা পেলেই যে কোন কাজ করতে পারে।

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও চলেন রাজার হালে, উঠা-বসা, চলা ফেরাহাই-প্রোফাইল লোকদের সঙ্গে। স্থানীয় প্রভাব আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পিআইও অফিস থেকে অন্যের নামের লাইন্সেসে বিভিন্ন সময়ে অনেক কাজ বাগিয়ে নেন। বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে অশোভন আচারণ করে তাদের কাজের থেকে মাসোহারা নেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মনিরুজ্জামানের ওই সমস্ত সম্পদের আনুমানিক মূল্য হবে তিন কোটি টাকা। এ সকল সম্পত্তি তিনি কি ভাবে অর্জন করেছেন তা খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে রহস্য জনক কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে, ধীর গতিতে তদন্ত কাজ এগুচ্ছে। তার খুঁটির জোরটা বেশ শক্ত বলে বিশ্বস্ত সূত্রের অভিযোগ।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। আমি কখনো কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবে আমার নামে বর্তমান বাজার মূল্যের ৫০-৬০লাখ টাকার সম্পদ আছে। যা আমি বর্তমান চাকুরীর আগে ও পরে বৈধ ভাবে টাকা আয় করে রেখেছি। আমার নামে অভিযোগকৃত কোটি কোটি টাকার সম্পদের কোন অস্তিত্ব নেই।’

মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত সম্পর্কে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্ত শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’

একই প্রসঙ্গে লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এসএমএ করিমের মতামত জানতে বারবার (০১৭৮৫-৫৭৬৬২৫) নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com