মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০২:১৯ অপরাহ্ন

ন্যায়বিচারের আশায় আজও বুক বেঁধে আছে ফেলানীর পরিবার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: বহুল আলোচিত ফেলানী খাতুন হত্যার এক যুগ পূর্তি আজ। দীর্ঘসূত্রিতার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে চলছে তার বিচারিক কার্যক্রম। ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নির্মম হত্যার শিকার ফেলানীর মৃতদেহ কাটাতারে ঝুলে ছিল দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা।

প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল গণমাধ্যমসহ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তীব্র সমালোচনার মুখে পরতে হয় ভারতকে। ফেলানীর পরিবার এখনো বুক বেঁধে আছে ন্যায় বিচারের আশায়।

জানা যায়, কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে মেয়েকে নিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল ফেলানী খাতুন ও তার বাবা নুরুল ইসলাম নুরু। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর কিশোরী মেয়েকে নিজ দেশে বিয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন।সেদিন ছিল ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি শুক্রবার। ভোর ৬টার দিকে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন বাবা ও মেয়ে। বাবা নুরুল হক কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে পার হতে পারলেও মেয়ে ফেলানী কাটাতারে উঠতেই ভারতীয় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি চালালে কাঁটাতারেই ঢলে পরে ফেলানীর নিথর দেহ। সেখানে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ঝুলে থাকার পর তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ৩০ ঘণ্টা পর পরদিন শনিবার বিজিবির কাছে লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। দীর্ঘ একযুগ পেরিয়ে গেলেও আজো ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার সম্পন্ন হয়নি। সেই সাথে বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন।

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পরে ভারত সেই চাপের মুখে পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়।

বিএসএফএর এ কোর্টে সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুন:বিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্ণ:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও বিএসএফের আদালতে।

এবার শুধু সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। আবারও ২০১৫ সালের ২ জুলাই ওই আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়।

এরপর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি। দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আজো ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার সম্পন্ন হয়নি। ফলে থমকে গেছে ফেলানী খাতুন হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি।

নাগেশ্বরী কলোনিটারী গ্রামের বাসিন্দা মজিরণ ও সামসুল জানান, প্রথম প্রথম লোকজন খোঁজখবর নিলেও এখন আর কেউ এই পরিবারের খোঁজখবর রাখে না। বিচার শুরুর সময় মনে হয়েছিল ন্যায় বিচার পাবে। কিন্তু যেভাবে বিচার হচ্ছে এবং সময় কাটানো হচ্ছে তাতে বোঝা যায় ফেলানী হত্যার বিচার পাবে না তার পরিবার। এছাড়াও ফেলানী হত্যার এক যুগেও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু ও মা জাহানারা বেগম বলেন, ভারতীয় সর্বোচ্চ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে থাকায় আমরা হতাশ। আমরা ন্যায় বিচারের আশায় দীর্ঘ এক যুগ ধরে অপেক্ষা করছি।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন জানান, করোনার কারণে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার ঝুলে থাকায় দু’রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব সম্পর্ক অটুট রাখতে দ্রুত ভারতের উচ্চ আদালত বিচারটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই আইনজীবী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com