শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৫২ অপরাহ্ন

তিস্তা নদীতে ফেলে শিশুকে হত্যা, ঘাতক পিতা গ্রেফতার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝার ইউপির রাবাইটারী এলাকায় বসবাসরত ভিকটিম নবজাতকের মা মোছাঃ ছামিরন বেগম (২৪) এর সাথে নাগেশ্বরীর গোপালপুর এলাকার মোঃ লাল মিয়া (২৮) এর গত ৩ বছর পূর্বে প্রেম করে বিবাহ হয়। অভিযুক্তের পরিবার বিবাহ মেনে না নেওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ তেতুলতলা নামক স্থানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে গত ৩ মাস থেকে বসবাস করে আসছিল।

গত ২২ অক্টোবর স্ত্রী ছামিরন তার বাবার বাড়িতে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। জন্মের পর থেকে তার স্বামী লাল মিয়া সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করতে থাকে। এমতাবস্থায় ছামিরন প্রতিবাদ করিলে গত ২৭ অক্টোবর বিকালে স্বামী লাল মিয়া পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তিস্তা ব্রিজের মাঝখানে স্বামী লাল মিয়া মোটরসাইকেল থামিয়ে নবজাতককে তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কথা বলে বিরতি নেয়। দুধ খাওয়ানোর এক পর্যায়ে ছামিরন বুঝে ওঠার আগেই তার স্বামী লাল মিয়া আকস্মিকভাবে নবজাতককে তার কোল থেকে জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্রিজের উপর থেকে তিস্তা নদীতে ফেলে দিয়ে সে দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়। তখন ছামিরন আর্তনাদ ও কান্নাকাটি করলে সমবেত পথচারীদের সে ঘটনাটি জানান। উপস্থিত লোকজন কাউনিয়া ফায়ায় সার্ভিসকে ফোন দিলে কাউনিয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যবৃন্দ নবজাতকে খোঁজাখুজি করেও কোনো সন্ধান পায় নাই। পরবর্তীতে ছামিরন হতাশাগ্রস্থ মনে বাড়ি ফেরার পথে তার খুনী স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে ন্যায্য বিচার পেতে সে মোবাইলে অভয় দিয়ে সুকৌশলে তার স্বামীকে তার নিকট আসতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর রাতে ঘাতক লাল মিয়া ছামিরনের নিকট আসলে ছামিরন সুকৌশলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কচাকাটা থানাধীন বলদিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত শাহিবাজার গ্রামে তার ভাইয়ের শ্বশুর মোঃ আব্দুল কুদ্দুস এর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে কচাকাটা থানা পুলিশকে সংবাদ প্রদান করেন। কচাকাটা থানা পুলিশ সংবাদ পাওয়া মাত্র তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়ে ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লাল মিয়া ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন এবং ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এ ঘটনায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু হয় এবং আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা ও সত্যতা স্বীকার পূর্বক বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।

কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রুহুল আমীন বলেন, পিতা কর্তৃক নিজ নবজাতক পুত্র সন্তানকে হত্যা এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। এই বিষয়ে নাগেশ্বরী থানায় গত ২৯ অক্টোবর একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে এবং ঘাতক পিতা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। নিরাপদ কুড়িগ্রামের লক্ষ্যে আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com