বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন জনের বিরুদ্ধে আগামী ১৩ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রসিকিউশন পক্ষে মামলার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। এ সময় আসামিদের স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালের কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী (আসামি) সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলমান ছিল। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মামলার আসামিদের চরম দণ্ড প্রাত্যাশা করে ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
অন্যদিকে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন। টানা তিন দিনের যুক্তি উপস্থাপন শেষে নিজের মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন তিনি। সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়েও যুক্তি খণ্ডন করেন আমির হোসেন। বিশেষত রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েক জনের সাক্ষ্য সামনে আনেন। একইসঙ্গে তাদের দেওয়া সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এ মামলার রাজসাক্ষী মামুন বাঁচতে চাইছেন বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এছাড়া মাহমুদুর রহমান ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেন না বলেই জবানবন্দি দেন। তার সাক্ষ্য এ মামলায় প্রভাব পড়বে না বলেও যুক্তি দেখান এই আইনজীবী। পরে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাজসাক্ষী মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন।
একইদিন এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে এ আদেশ আদেশ।
এ মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।