সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৫৫ অপরাহ্ন

এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তির দুঃচিন্তায় বৃষ্টি খাতুন

বাঘা(রাজশাহী)প্রতিনিধি:: বাংলায় একটি বাগধারা আছে, ‘গোবরে পদ্মফুল’। যার অর্থ অস্থানে ভাল জিনিস। ৫ জনের থাকা ঝুপড়ি একটি ঘরে লেখাপড়া করে নিজের আলোয় আলোকিত হয়েছে স্বাক্ষর জ্ঞান ও গরীব পরিবারের মেয়ে মোসাঃ বৃষ্টি খাতুন। ১০ বছর ধরে নানীর জীর্ণ কুঠিরে বসবাস করে গতবারের মতো এবার এইচএসসিতেও চমক দেখিয়েছেন সেই বৃষ্টি খাতুন। গত বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে এবার মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

এর আগে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার এইচএসসিতেও রয়েছে। বৃষ্টি খাতুন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাঘা উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নিজের টিউশনীর টাকা আর খালার সহযোগিতায় চলেছে বৃষ্টি খাতুনের লেখাপড়া। বাবার অবর্তমানে সংসার চালিয়েছে মা।

বাঘা পৌরসভার কলিগ্রামের বাসিন্দা জাহেরা বেওয়ার (বৃষ্টি খাতুনের নানি) আড়াই কাঠা জমির উপর টিনের ছাউনি ছাপড়া একটি ঘরে বসবাস করেন ৫জন। ঘরের মধ্যে দুইটি চৌকির একটিতে থাকেন বৃষ্টি খাতুন, তার ১ বোন, আরেকটি চৌকিতে থাকেন মা ও খালা। বারান্দায় থাকেন নানি জাহেরা বেওয়া। বিদুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে পাশের বাড়ি থেকে।

বৃষ্টি খাতুনের লেখাপড়ার খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার মা বলেন, ‘আমি আর পারব নাকো বাবা বিয়ে দিতে চেয়েও বিয়া করল না। এখন কিভাবে শহরের ইসকুলে (কলেজে) পড়াব? তোমরা দেখে শুনে একটা বিয়া দিয়া দেও।’ কুসুমা খাতুন বলেন, অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়ার খরচতো দুরের কথা ভালো খাবার কিংবা পোষাকও দিতে পারেননি। নিজের প্রচেষ্টা আর তার বোনের সহযোগিতায় সাফল্য বয়ে এনেছে।

জানা গেল, বৃষ্টি খাতুনের মা কুসুমা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল বাঘা উপজেলার পানিকুমড়া গ্রাামের দস্তুল আলীর সাথে। মতবিরোধে ২ মেয়ে নিয়ে চলে আসেন কলিগ্রামে মায়ের জীর্ণ কুঠিরে। ৫বছর আগে সেই দুই মেয়ে মায়ের কাছে রেখে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করছিলেন। পরে ফিরে এসে এখন থাকছেন মায়ের কাছে। তার ২ মেয়ের মধ্যে বৃষ্টি বড়। ছোট মেয়ে শ্রাবনী আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল বৃষ্টি খাতুন।

কুসুমা খাতুনের অপর বোন মাবিয়া খাতুন বলেন, তার বিয়ে হলেও এখন মায়ের কাছে থাকেন। তার নিজের কোন সন্তান নাই। হাতের কাজ করে আর একবেলা পাশের বাড়ির মানুষের কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়ায় সহযোগিতা করেছেন বৃষ্টি খাতুনকে। তিনি জানান, বৃষ্টি খাতুন নিজেও টিউশনি করে লেখা পড়ার খরচ যুগিয়েছে। সরকারি ভাবে বয়স্ক ভাতা পান তার মা জাহেরা বেওয়া। সেই টাকায় সংসার চলে না বলে মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিতে হয়।

বৃষ্টি খাতুন জানান, ‘আমি অন্ধকার থেকে আলোতে এসেছি নানা রকমের বাঁধা পেরিয়ে। বিয়ের ব্যাপারে কোনো চিন্তা করছেন না। জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুযোগ পেলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে গবেষণায় আত্মনিয়োগই হবে তার জীবনের ব্রত। যদিও পরিবারের আর্থিক অনটন সেই স্বপ্নের অভিযাত্রায় বাঁধ সাধবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে বৃষ্টি খাতুনের। তবে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রান চেষ্টা মা ও খালার।

শাহদৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক জানান, বৃষ্টি খাতুন আমার কলেজের শিক্ষার্থী। প্রতিবন্ধকতা জয় করে সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছে। আমি আশা করি সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে। আমার কলেজে ভর্তি হলে তার জন্য সাধ্য মোতাবেক সার্বিক চেষ্টা করবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com