মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

উলিপুরে বাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, টাকা সিন্ডিকেট চক্রের পকেটে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের উলিপুরে ধামশ্রেনী ইউনিয়নের টেংনাকুড়া (নাওড়া)’র খাল খননের মাটি যাচ্ছে ভাটা ও স্থাপনায় এবং লাখ লাখ টাকা যাচ্ছে মাটি কেনা বেঁচা শক্তিশালী একটি চক্রের পকেটে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা খালের মাটি বিক্রি করে ঝুঁকিতে ফেলেছে বাঁধের দুই ধার। বন্যার সময় আবাদি জমিসহ ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন বাঁধের দুই পাশের মানুষ।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খননের কাজ করলেও এরপর কর্তৃপক্ষ আর খোঁজ খবর নিতে আসেননি যে কারনে বাঁধের মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। সচেতন মহলের অভিযোগ দৃষ্টিহীন ও নির্বিকার কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে সোমবার (১৬ জানুয়ারী) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ২টি স্থানে প্রায় ১০-১৫ জন শ্রমিক বাঁধ কাটছে আর সেই বাঁধের মাটি ট্রাকটরে করে নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির মহাজন। বাঁধের মাটি বিক্রির টাকা যাচ্ছে স্থানীয় ক্ষমতাধরদের পকেটে। বাঁধের উত্তরের দীর্ঘ যে বাধটি এটি লম্বায় প্রায় ৩ কিলোমিটার এই ৩ কিলোমিটারের মাটি পুরোটাই সরিয়ে ফেলেছে একটি চক্র। এখন দক্ষিনের পাড়ের মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই মাটি বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছে উপর মহলের সরকারি কর্মকর্তাগণ। বাঁধের পাশে জমি মালিকদের ম্যানেজ করে একটি চক্র শুরুতেই উপরের টপ সয়েলগুলো বিক্রি করেছে ইটভাটায় এখন নিয়ে যাচ্ছে স্থাপনায়। যেভাবে বাঁধের মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে উপরের জমিগুলো আগামী বর্ষায় ভেঙ্গে মানুষের প্রয়োজনে সরকারের করা খালটি আবার পুরণের ঝুঁকি রয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চিলমারীর উপজেলার কাঁচকোল থেকে উলিপুরের ধামশ্রেণি ইউনিয়নের টেংনাকুড়া পর্যন্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার খননের কাজটি শুরু করা হয়। দু’টি দরপত্রের মাধ্যমে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয়া হয়। যার প্রায় ১৩শ মিটার খনন করা হয়েছে। বাকি কাজটি আর করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।

কেন কাজটি আটকে গেলো এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, মাঠ পর্যায়ের কৃষকের সাথে খাল খননের বিষয়টি শেয়ার করতে গেলে তারা অধিগ্রহনের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন, যার কারনে আর কাজটি করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো জানান, ১৫-২০ দিন আগে মাটি কাটা বন্ধ করা হয়েছিলো আবার যেহেতু চালু হয়েছে বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে। মাটি বিক্রির সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক্টর মালিক জানান, আমরা ১শ টাকায় প্রতি গাড়ি মাটি কিনে ৬শ টাকায় বিক্রি করি। ড্রাইভার বাবু জানান, জমি মালিকরা তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করে তারপর তারা মাটি ক্রেতাদের কাছে মাটি পৌছে দেয়।

জমি মালিক, মাহমুদুল হাসান সুজন ও আমিন উদ্দিন জানান, এই গড়ের মাটি কাটার সুযোগ করে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উত্তরের গড়ের মাটি স্কাভেটর (ভেকু) ওয়ালারা পয়সা নিয়ে শুরুতেই জমি মালিকদের সাথে সমন্বয় করে এই অন্যায় কাজটি করেছে, এরপর দক্ষিনের গড়ের মাটি বিক্রি শুরু হয়েছে। গড়ের মাটি কাটায় ভবিষ্যতে ক্ষয়-ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। মাটি বিক্রিতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো দু’জন জানান, কিছু মাটি বিক্রিও করছি এবং নিজেদের কাজেও ব্যবহার করছি। তারা আরো জানান, কিভাবে সরকার আমাদের অধিগ্রহণ করলো সে বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মাটি কাটা বন্ধের ব্যবস্থা এখনি নিচ্ছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com