বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন
সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে ৫০০ মেট্রিক টন আম রফতানি হচ্ছে। রফতানি হওয়া আমের তালিকায় রয়েছে হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও গোবিন্দভোগ। তবে এ বছর গোবিন্দভোগ আম রফতানির তালিকায় প্রথম উঠেছে। এ আম যাচ্ছে জার্মানিতে।
মাটি ও আবহাওয়াজনিত কারণে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। স্বাদে, গুণে অনন্য হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরেই সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম রফতানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। গত শনিবার (০৮ মে) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরেলকাতা ইউনিয়নের পুটুনি এলাকার চাষি দাউদ মোল্লার বাগানের গোবিন্দভোগ আম প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যদিয়ে বিদেশে আম রফতানি কার্যক্রম উদ্বোধন করে কৃষি বিভাগ।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, অন্য জেলার তুলনায় ১৫-২০ দিন আগে সাতক্ষীরার আম পরিপক্ক হয়। সে কারণে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রফতানি বাজারে বেশি গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম। তবে এ বছর থেকে রফতানি তালিকায় গোবিন্দভোগের নাম যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে রফতানি হওয়া আম বাগানগুলোতে আগে থেকে তত্ত্বাবধান শুরু করে কৃষি বিভাগ। যেন কোন চাষি ওই বাগানগুলোতে কোন কীটনাশক প্রয়োগ করতে না পারে। সম্পূর্ণরুপে বিষমুক্ত আম রফতানি হয় বিদেশে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি রয়েছে। এসব চাষির আম বাগান রয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
কলারোয়া উপজেলার আমচাষি দাউদ মোল্লা জানান, বিদেশে রফতানির জন্য বায়াররা প্রতি মণ আম ২৭০০ টাকা দরে আমাদের থেকে কিনে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। আমাদের দাবি, ন্যায্যমূল্য থেকে যেন আমরা বঞ্চিত না হই। তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী গফুর শেখ বলেন, আমের ফলন বেশি হলেও এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় আম বেশি বড় হয়নি। মাঝারি আকারের হয়েছে। তা ছাড়া এ বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিও হয়নি। এ বছর লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জেলা প্রশাসন সাতক্ষীরার আম ভাঙার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছে। মুম্বাই, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ আম ১ মে, হিমসাগর আম ২১ মে ও ল্যাংড়া আম ১ জুন থেকে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, রফতানির লক্ষ্যে জেলার কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, তালা, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার ৩৫০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ বছর বাশার অ্যাগ্রো, ইসলাম গ্রুপ, গ্লোব ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, আর আর এন্টারপ্রাইজসহ ১৪টি কোম্পানির মাধ্যমে সাতক্ষীরার আম রফতানি হবে।
ইতোমধ্যে গোবিন্দভোগ আম জার্মানিতে রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সাতক্ষীরা থেকে ৫০০ মেট্রিক টন আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হবে। এ ছাড়া দেশীয় বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম থাকবে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, গাছ থেকে পরিপক্ক আম ভাঙার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে আম পেড়ে কার্বাইড দিয়ে বাজারজাতকরণের চেষ্টা করলে আম বিনষ্টসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কালীগঞ্জ ও কলারোয়ায় অভিযান চালিয়ে অপিরপক্ক আম বাজারজাতকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। আমের মৌসুমব্যাপী এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।