রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
লাইফস্টাইল ডেস্ক:: আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, শীত এলেই কিছু চর্মরোগ আবির্ভূত হয়, যা গরমকালে খুব একটা দেখা যায় না। আরেকটি ব্যাপার আমরা প্রায়ই লক্ষ করি, রোগীরা বলেন, শীত এলে তার শরীর খুব চুলকায়। যদি একান্তই অসহ্য হয়ে পড়ে, তবে সেই ক্ষেত্রে হালকাভাবে হাতের তালু দিয়ে ত্বক চুলকানো যেতে পারে। মূলত শুষ্কতার কারণে এমন চুলকানি দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে ভালো কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকে। ময়েশ্চারাইজার পাওয়া না গেলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেও ত্বক ভালো থাকে। চুলকানির পরিমাণ মারাত্মক হলে গ্লিসারিনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
এবার আসা যাক একটি রোগের কথায়, যা শীত এলেই বাড়ে। রোগটির নাম ইকথায়োসিস। এটি একটি জন্মগত রোগ এবং এ রোগ শিশুকাল থেকেই দেখা দেয়। দেখা গেছে, প্রতিহাজারে একজন এ রোগে ভুগে থাকেন। নারী-পুরুষের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সমপরিমাণ। এ রোগে যারা আক্রান্ত হন, তাদের হাত-পায়ের ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়ি গুঁড়ি আঁশ পায়ের সামনের অংশ ও হাতের চামড়ায় দেখা যায়। তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান থাকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। রোগীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলেনÑ রোগটি তার দেহে ছোটবেলা থেকেই আছে এবং প্রতিবছর শীত এলে বেড়ে যায়। এদের হাত ও পায়ের তালুর দিকে তাকালে দেখা যায়, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট, যা কিনা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। তাদের অ্যালার্জি বিষয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে বলে থাকেন- নাক দিয়ে প্রায়ই পানি পড়ে। অর্থাৎ তাদের সর্দি থাকে। তাদের মা-বাবার ব্যাপারে খবর নিলে আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, তাদেরও কোনো না কোনো ধরনের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ছিল বা এখনো আছে।
এ রোগটি কখনোই একেবারে ভালো হয় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যদি ত্বকে তৈলাক্ত পদার্থ নিয়মিত মাখা যায়। সে ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড খুবই কার্যকর। এটি পাওয়া না গেলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলেও খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে গ্নিসারিন ব্যবহারের সমস্যা হচ্ছে, ত্বক আঠা আঠা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে একটি টাওয়েল দিয়ে অতিরিক্ত গ্লিসারিনটুকু চেপে তুলে নিলে ত্বকের আঠালো বা চটচটে ভাব কেটে যায় এবং ত্বক খুবই ভালো রাখা সম্ভব।
অ্যাকজিমাও শীত এলে বাড়তে পারে। তাই এ রোগে আক্রান্তদের সব সময় বলে দিই, ভালো হওয়ার পরও যেন স্থানটি শুষ্ক হতে দেওয়া না হয়। একটি বিশেষ ধরনের অ্যাকজিমা আছে, যার নাম অ্যাকজিমা ক্রাকুয়েলেটাম। এটি সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের হয়। এটি শীত এলেই বাড়ে। কারণ শীতে বাতাসের জলীয় পদার্থ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের গায়ে ফাটা ফাটা দাগ ও হালকা আঁশ লক্ষ করা যায়। কখনো কখনো ত্বক পুরো হয়ে পড়তেও দেখা যায়। একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, চুলকালে ত্বক পুরো হতে থাকে এবং একপর্যায়ে তা শক্ত ও অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে। তাই এসব চর্মরোগের ক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ