শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে তিস্তা ধরলায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত; পানিবন্দী হাজারো মানুষ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা, স্বর্নামতি, রত্নাইসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২.৭৪ সেন্টিমিটার) ১৪ সে. মি উপরে ও ধরলা নদী বিপদসীমার (৫২.৭৫ সেন্টিমিটার) ১৫ সে. মি উপরে রেকর্ড করা হয়েছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০ সেন্টিমিটার)। এছাড়াও জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৮৪ মি. মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ফলে জেলায় নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ইতিমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় পানি বিপদসীমার কাছাকাছি এবং বিকেল ৩ টায় বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে রাত ৯টায় ডালিয়া পয়েন্ট পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সকাল নয়টায় তা কমে বিপদসীমার ৫ সে. মি উপরে রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সে. মি. উপরে রেকর্ড করা হয়েছে। রত্নাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত কয়েকদিনে ৮/১০ টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে আরও ফসলি জমি ও বাড়িঘর।

এছাড়াও জেলা বিভিন্ন নদী ও খাল, ডোবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী লোকজনের বাড়িঘর। চলাচল, রান্নাসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম বিঘ্ন হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি ও জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, তাঁতীপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজানের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রানীগঞ্জের ৭,৮ নং ওয়ার্ড, সিংঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর,গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত করেছে।

হাতীবান্ধার চর সিন্দুর্না আনোয়ার হোসেন বলেন, তিস্তার নদীর পানি বিকেল থেকে হুহু করে বেড়ে রাতে আরও বাড়ছে। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় কয়েকদিন থেকে রাতে ঘুম আসছে না চোখে। গত রাতে তিস্তা পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন এর ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যা থেকে ক্রমে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের জুয়েল মিয়া বলেন, গত রাত থেকেই পানি বাড়ছে। এখন অনেক পরিবার পানিবন্দী। চলাচল সহ সবকিছু আটকে আছে। এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়েছে। পানিবন্দী মানুষজনের সকল ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বন্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলীত পরিবারগুলোর মাঝে তালিকা তৈরি করে দ্রুত খাদ্য সামগ্রহী প্রদান করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com