শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

রানীশংকৈল কাতিহার হাটের জমি বেদখল প্রশাসন নিরব

রানীশংকৈল (ঠাকুরগাও) প্রতিনিধিঃঃ
ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার নামক গরু ছাগল কেনা-বেচার বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী হাটের ৯ একর ৭৩ শতক বিশাল পরিমান সরকারী জমি স্থানীয় ভুমিদস্যুদের দ্বারা বেদখল হয়ে গেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় হাটের প্রায় বেশির ভাগ জমি জুড়ে বিভিন্ন দালান, অর্ধদালান টিনসেডের দোকান, ঘর ব্যবসায়িক মিল ও ব্যক্তিগত বাড়ীঘর অবৈধভাবে গড়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছেন।
অন্যদিকে কাতিহার হাট স্থানীয় প্রশাসন বাৎসরিক চুক্তিতে নিয়ম অনুযায়ী মোটা অংকে হাট ইজারা দিলেও নিয়োগকৃত ইজারাদারকে গরু ছাগল ও সাইকেলের হাট বসাতে হচ্ছে ঐ এলাকার ব্যক্তিমালিকানার নিকট ভাড়া নেওয়া জমির ওপর। অথচ হাটটির ৬০ শতাংশ রাজস্ব গরু ও ছাগল এর বাজার থেকে আদায় হয়ে থাকে।
এ কারনে ইজারাদার সরকারী নিয়মের বাইরে গিয়ে বাধ্য হয়ে জনসাধারনের নিকট বাড়তি টাকা আদায় করছেন। এতে বৎসরে লক্ষ লক্ষ টাকা গোচ্ছা দিচ্ছেন জনসাধারণ।
এদিকে ঐ হাটটি বাংলা ১৪২১ সনে এক বছরের জন্য ৬২ লক্ষ, ১৪২২ সনে ১ কোটি ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ও ১৪২৩ সনে ৭৯ লক্ষ ২শত টাকা বাৎসরিক ইজারা নিয়ে ইজারাদার রেজাউল ইসলাম ও এস.এম. রাজা মোটা অঙ্কের টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে তারা দাবী করেন।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটের সরকারী নিদিষ্ট জমির ওপর ব্যক্তি মালিকানার বাড়ী ঘর, লেদের দোকান হোটেল, বয়লার মুরগীর দোকান, সারের স্টক ব্যবসার জন্য গুদাম ঘর, হলুদভাঙ্গা ও ধান পিশানো মিল এমন প্রায় শতাধিকের উপর স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
এ স্থাপনাগুলো পাকা, আধা পাকা,কাচা টিনসেট অবস্থায় রয়েছে। হাটের নির্দিষ্ট জমির উপর শুধু মাত্র ধান, কাচামাল হাস মুরগী ছোট ছোট ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের দোকান বসেছে।
আর গরু ছাগল সাইকেলের হাট খানিকটা দুরে ব্যক্তিমালিক অমুল্য রায়, সফির মেম্বার, হিরা লাল রায়, ইলিয়াস মাস্টারের জমির উপর বসেছে। সেখানে সরকারী নির্ধারিত গরুর ইজারা ১৮০ টাকার পরিবর্তে ২২০ টাকা ছাগলের ৮০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা করে নিতে দেখা গেছে। যদিও ইজারা রশিদে সরকারী নির্ধারিত টাকার পরিমাণ লেখা রয়েছে। এ নিয়ে মাঝে মাঝে হাটে গরু ছাগল কিনতে আসা মানুষদের সাথে ঝগড়া ঝাটিও হয় ইজারাদারের লোকজনের। তবে হাট ইজারাদারের দাবী ভাড়াকৃত জায়গায় হাট বসানোর কারনেই আমাদের বাড়তি টাকা এক ধরনের বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে। সাধারন মানুষ এক ধরনের জিম্মি হয়েই অতিরিক্ত টাকা ইজারা দিচ্ছেন।
হাটের জমি দখল করে লেদের ব্যবসা করছেন ঐ এলাকার বাসিন্দা উত্তম কুমার, তার সাথে হলে বলেন,২০০৪ সালে তৎকালীন ইজারাদারের সহযোগিতায় দোকান ঘরটি তুলে এখন পর্যন্ত ব্যবসা করছি,হাটের ইজারা দেন কিনা প্রশ্নে বলেন না দেয় না। একইভাবে ইলিয়াস তিনি হাটের জমির উপর ব্যক্তিগত গুদাম ঘর করেছেন,বকুল মাষ্টার মিল করেছেন এমন প্রায় শতাধিক ব্যক্তিমালিকানার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে হাটের জমির উপর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে ১৪২৪ বাংলা সনে হাটটি খাস কালেকশন হিসেবে ইজারা আদায় হচ্ছে। এজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসান ইজারা আদায়কারী হিসেবে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভেলাতৈড় গ্রামের মৃত আলহাজ্ব মহিউদ্দীন এর পুত্র মোঃ গোলাম আজমকে হাট প্রতি ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬১৫ টাকা চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ করেছেন।
অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে গত বছরের মার্চ মাসে কাতিহার হাট ১৪২৪ বাংলা সনের ১ বছর মেয়াদে ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্যে উপজেলা প্রশাসন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী মোঃ গোলাম আজম ২৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার পে-অর্ডার সংযুক্ত করে ইজারাপত্র দাখিল করেন। ইজারাদার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাট ইজারা নিতে চাইলেও উপজেলা প্রশাসন ও ইউএনও অফিসের অফিস সুপার মোঃ রফিক এর দূর্নীতি ও নানা জটিলতার কারণে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে একটি সুত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়।
এ ব্যপারে ৫নং বাচোর ইউপির চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র নাথ বর্ম্মন বলেন,বিষয়টি নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। আশা রাখি খুব শ্রীঘই হাটের জমি উদ্বার হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসান জানান, হাটের বেদখলি জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com