শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

রাণীশংকৈলে দেশসেরা স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় জাতীয়ভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তুপ তৈরি হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে স্যোশাল মিডিয়ায় ভিডিও ভাইরাল, থানায় সাধারণ ডায়েরী, শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ।

জানা যায়, মডেল স্কুলে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। হঠাৎ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরকারি কারিকুলামকে সমস্যা দেখিয়ে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে অভিভাবকরা। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর নওরোজ কাউসার কাননকে সাথে নিয়ে শতাধিক অভিভাবক বিদ্যালয়ে জড়ো হয়। ১৫ থেকে ২০ জন অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করার পর প্রধান শিক্ষক তার চেয়ারে এসে বসে। এসময় অভিভাবকরা ভর্তি কেন বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা সিদ্দিকা আলাপচারিতার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একরকম কারিকুলাম এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম হওয়ায় এটি সমস্যা মনে করায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। এসব কথা শুনে অভিভাবক সদস্য কানন সহ অন্যান্য অভিভাবকরা বলে সরকারি নিয়মকে অবজ্ঞা করে আপনি এটা করতে পারেন না। এভাবে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু’পক্ষে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এই উত্তেজিত ঘটনার দু’পক্ষে দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হলে বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই পক্ষেই থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছে।

স্কুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিউটি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা আক্তার স্কুলের স্টাপ মিটিংয়ে বলেন এবার তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করাবেন না। প্রধান শিক্ষকের এমন মন্তব্য নিয়ে অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা এর বিরোধিতা করেন। এ ব্যপারে অভিভাবক ও স্কুল কমিটির সদস্য সাবেক কাউন্সিল সিরাজউদ্দিন সিরু, ইস্তেকার, মহসিন, সাবেক কাউন্সিল সেফাউল আলম, রুমা বসাক, সেলিনা আকতার, মুনজুরুল আলম, মাসুম, রফিকুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ ও শেফালী খাতুনসহ কয়েকজনকে বদলী করলে সব ঠিক হয়ে যাবে, এরাই স্কুলে গ্রুপিং সৃষ্টির মূলহোতা।

এ ব্যাপারে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা সিদ্দিকার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। সংশ্লিষ্ঠ ক্লাস্টারের সহকারীর শিক্ষা কর্মকর্তা ঘানস্বাম রায় বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে কোচিং বাণিজ্য ও তাদের মধ্যে অভ্যান্তরীণ কোন্দল নিয়েই মূলত গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিধায় স্কুলটির শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জামাল উদ্দীন চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী ভর্তি বন্ধ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। এটি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ ওই বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ানোর জন্য জনবল কাঠামো দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া মান সম্মত শিক্ষক সেখানে দেওয়া হয়েছে এবং সরকারের ও সে সময় একটি সিদ্ধান্ত ছিল।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাহিমউদ্দিন বলেন, ওই ঘটনার সাথে জড়িত অভিযুক্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন,আমি বাকবিতন্ডার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের অভ্যন্তরিণ কোন্দলের ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com