বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

বিকল্পেরও অসংখ্য বিকল্প!

রাজু আহমেদ।।
কেউ-ই শেষ বিকল্প নন! একজন চিকিৎসক চিকিৎসা না দিলে চিকিৎসা থেমে থাকবে না, একজন শিক্ষক না শেখালে শিক্ষা বন্ধ থাকবে না কিংবা একজন প্রেমিক ভালো না বাসলে ভালোবাসা বন্ধ থাকবে না। শত-সহস্র বিকল্পের পথ উম্মুক্ত! কেউ যদি মনে করে সে না করলে সেই কাজটি আর হবে না-সেটি ভুল হবে। কারো জন্য কিছুই আসলে থেমে থাকে না। যে বলেছিল, ‘তোমায় ছাড়া বাঁচবো না’-না পেয়ে সে হয়তো আরও সজীব ভাবে বেঁচেছে। যত দুঃখ আসিতেছিল তার অনেকাংশই মাঝপথে অন্য গন্তব্যে ভীড়েছে! সে ছাড়া হবে না কিংবা সে ছাড়া আর কেউ পারবে না-এই জাতীয় বুলি সহজে কার্য হাসিলের প্রলোভন মাত্র। কারো জন্য কিছুই আটকে থাকে না। চাঁদ-সূর্য কিংবা জোয়ার-ভাটা এক মুহূর্তের জন্য তাঁর নীতিপথ বদলেছে? কত লয়-প্রলয় হলো তাতে রাত্রি-দিনের স্বভাব পাল্টেছে?

নিজেকে দুর্লভ করে রাখলে তাতে ভালোবাসা হারাবেন। ভাব ধরে থাকলে বন্ধুত্ব খোওয়াবেন। অহংকার-দম্ভ উঁচিয়ে রাখলে সরলতাকে বলি দিবেন। সসীম সৃষ্টির কারো কাছে কি সেই ক্ষমতা আছে যার শূণ্যতা সে ছাড়া আর কেউ পূর্ণ করতে পারবে না? নাই। আমরা অসংখ্য-অজস্র বিকল্পের মাঝে বাস করি। গন্তব্যে পৌঁছার পথ একাধিক! কেউ একটাতে-দু’টোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, কেউ সহজ যাত্রা কঠিন করে তুলতে পারে কিন্তু চলা বন্ধ করতে পারে না। রোগের চিকিৎসা রোগীর কাছেও থাকে! শিক্ষা মূর্খের হাটেও মেটে! এমন কিচ্ছু নাই-যা আপনি/আমি না থাকলে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে! যদি কেমন কিছু থেকেও থাকে তবে তা ছাড়াও জীবন চলে। হয়তো অতীতের চেয়ে আরও ভালোভাবেই চলে। ভালোবাসাহীন হয়েও মানুষ দীর্ঘায়ু পেয়েছে!

সৎগুণগুলো সহজলভ্য করতে হয়। বিনয়কে চাদর বানালে তবেই মানুষ হওয়া হয়। কোন বিশেষজ্ঞ যদি ভাবে সে ছাড়া গবেষণা বন্ধ থাকবে, কোন প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে সেটার কার্যক্রম ছাড়া দেশ অচল হবে কিংবা কোন প্রেমিক যদি ভাবে তারে ছাড়া প্রেম মরে যাবে-তবে তারাই পিছিয়ে গেল! এখানে কারো জন্য কিছুই থেমে থাকে না। মহারাজার ঘুম ভাঙেনি বলে সকাল দেরি করেনি! কাজ শেষ হয়নি বলে সন্ধ্যা বিলম্ব করবে না। কাউকে অনেক গুরুত্বের ভাবনায় কাজের অবসরের বয়সসীমায় দু’বছর ছাড় দেওয়া চলে কিন্তু মৃত্যু পিছিয়ে দেওয়া যায় না! নবী ছাড়াই ধর্ম চলছে, পন্ডিত ছাড়াও শিক্ষা! হাকিম ছাড়াও হুকুম থাকছে-জগতের এটাই চিরাচরিত দীক্ষা। সুতরাং নিজেকে খুব দামী ভেবে জীবনকে দুঃসহ করে তোলা সঠিক কাজ নয়! সময় সামনে আয়ুর সমানে ধায়!

আমি ছাড়া উপকার করার কেউ নাই, আমি ছাড়া এমন উপহার দেওয়ার কেউ নাই কিংবা আমিই একমাত্র সমাধান দাতা-এমন ভাবনায় সমস্যা জিইয়ে রাখবেন না। আমার আয়ে পরিবার চলে-এমন দাম্ভিকতা যেনো আপনাকে বিপথগামী না বানায়। এমনও তো হতে পারে, পরিবারের কারো রিজিক আপনার মাধ্যমে আসছে! যার বদৌলতে আপনি খেতে পারছেন! ভিক্ষুকও হাজার দুয়ারে যায়! দু’দ্বার বন্ধ থাকলে তাতে ভিক্ষুকের আহার বন্ধ থাকে না। কারো দয়ায় কেউ চলে-এই ভাবনাটাই মূর্খের। দাতাও অসীমের দয়ায় টিকে আছে। সসীমের জন্য সসীস সত্ত্বা কখনোই শেষ ভরসা নয়। আরো উর্ধ্বের কিছু, আরও উপরের কেউ! তিনি অচালিত চালক নিশ্চয়ই! ঋণী এবং ধনী-মানুষ এই দুইয়ের মাধ্যম মাত্র! কারো অপেক্ষায় কারো জীবন ক্ষণকালের জন্য থমকে যেতে পারে কিন্তু কখনোই থেমে থাকে না। মনের বিছানায় যে চিহ্ন রাখেনি মনও তাকে মনে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না।

মহান সাহিত্যিক, অগাধ পন্ডিত কিংবা তুখোড় খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে শূণ্যতার কথা বলতে পারি কিন্তু কোনটাই কি থেমে আছে? যে যুগে মহান চিকিৎসকরা ছিলেন সে যুগেও রোগীর কষ্ট ছিল, মৃত্যুতে শোক ছিল! যখন যান্ত্রিক আধুনিকতা ছিল না তখনো মস্তিষ্কের অগ্রসর চিন্তা ছিল! আমি ছাড়া এটা সম্ভব নয়-সেটা সৃজিতের পক্ষে বলা সম্ভব নয়! কাউকে ক্ষণিকের জন্য ঠেকিয়ে রাখা যায় কিন্তু চিরকালের জন্য দমিয়ে রাখা যায় না। জগতের মাঝে অসংখ্য ভাণ্ডের সমাহার! দু’টি ভাণ্ড ঢাকনা দিয়ে রাখলে তাতে উৎস বন্ধ হয়ে যায় না। বরং সাধনায় যা অর্জিত হয় তার প্রতি আলাদা দরদ থাকে। খুঁজলে মিলবে না, সমস্যায় পড়লে সমাধান হবে না, এক দুয়ার থেকে ফেরালে অন্য দ্বার খোলা থাকবে না-এমন জটিলতা দিয়ে স্রষ্টা সৃষ্টিকে গ্রহবাসে পাঠাননি! বরং দাম্ভিক-অহংকারীকে একসময় অপ্রয়োজনীয় মনে হবে! অসংখ্য বিকল্পের মাঝে সখা শত্রুতে পরিনত হলে তার উঠোন পদচিহ্নহীনতায় যাবে! ভালোবাসা মরে যেতেই আরও তীব্র হয়ে জন্মে অতঃপর বাড়ে!

রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution