রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে ডিএনডি’র জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরি বৈঠক

নারায়ণগঞ্জ  প্রতিনিধিঃ প্রায় ১৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ডিএনডি মেগা প্রকল্পের চারটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ১০টি খালের সংস্কার, একটি নতুন খাল খননে ও ডিপিডিসি’র বিদ্যুৎ সংযোগে প্রতিবন্ধকতা এবং বাসিন্দাদের অসচেতনাকে ডিএনডি’র কৃত্রিম জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের অন্যতম অন্তরায় বলে জানিয়েছেন এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহসানুদ তাকবিম চৌধুরী।

চলতি বর্ষায় অতিবৃষ্টির কারণে ডিএনডি বাঁধ এলাকার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার অবর্ণনীয় দুর্ভোগের প্রতিকার করতে রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সমন্বিত বৈঠকে উঠে আসে এই চিত্র। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান, ডিএনডি প্রজেক্টের কর্মকর্তারা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা।

বৈঠক চলাকালেই এমপি শামীম ওসমান মোবাইলে কথা বলেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের সঙ্গে। উপমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেছেন, আগামী রোববার তিনি সরেজমিনে ডিএনডি এলাকা পরিদর্শনে আসবেন। এ সময় তিনি ডিএনডি’র জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।

বৈঠকে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান বলেন, যখন ডিএনডি তৈরি করা হয়েছিল, তখন ডিএনডি ছিল বেহেশতের টুকরো। কিন্তু এখন তা অভিশাপ। কারণ যুগে যুগে এই ডিএনডির খালগুলোকে দখল করা হয়েছে। নিজ এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কারণে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ১৩শ কোটি টাকার প্রজেক্ট চলাকালেও অনেক খাল একদিকে পরিষ্কার করা হচ্ছে, আরেক দিকে ভরে যাচ্ছে। লিংক রোডের কাজের জন্য প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তায় আমরা বালু ভরাট করছি। ওই আট কিলোমিটার রাস্তায় ডিএনডির যে খালগুলো রয়েছে, সেগুলোর সংযোগ ছিল। আমাদের ডাবল রেললাইনের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেললাইন তৈরি করছেন। সেই রেললাইন তৈরি করার পর যেদিক দিয়ে পানি সাবরেজিস্টার অফিসের পাশের খাল হয়ে বেরিয়ে যেত, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি সেই এলাকার চেয়ারম্যানদের বলেছি সেটা ভেঙে ফেলুন, প্রয়োজনে আমার ওপর দায় দেবেন।

তিনি আরও বলেন, ফতুল্লার কুতুবপুরে ওয়াসার পাশে আমাদের একটা রাস্তা আছে। আগে সেই এলাকায় প্রতি বর্ষায় ওয়াসা ১০টি করে অস্থায়ী পাম্প বসাতো। এখন ঢাকা সিটি করপোরেশন ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে সেই পাম্পটা এখন চলছে না। আমাদের আরেকটি এলাকা আছে, যা অভিশপ্ত এলাকা হয়ে গেছে। সেটা হলো ফতুল্লার লালপুর এলাকা। সেই জায়গাটা হলো নিচু এবং পানি বের হওয়ার যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলো উঁচু। নিচু জায়গা থেকে তো পানি আর উচু জায়গায় যেতে পারবে না। ডিএনডির খাল হচ্ছে, তার সঙ্গে যদি লোকাল ড্রেনের সংযোগ না করি তাহলে পানিটা যাবে কীভাবে। এই সমন্বয়হীনতাটা একটি সমস্যা।

শামীম ওসমান বলেন, এখানে জনসচেতনতার একটা ব্যাপার আছে। ড্রেন পরিষ্কার করার বাজেট একবারই আসে। পরিষ্কার করার পর দেখা যায় ড্রেনটা দুই-তিন মাসে ভরে যাচ্ছে। ময়লার সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হলে এই সমস্যাটা কমে যেত। দুই বছর আগে সিটি করপোরেশনকে ডাম্পিং করার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জালকুড়ির মানুষের চরম আপত্তির পরেও জেলা প্রশাসন ওই জায়গা বরাদ্দ দেয়। আজ পর্যন্ত সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। ময়লাটা ফেলা হচ্ছে লিংক রোডের পাশে।

এদিকে ডিএনডি প্রকল্পের আওতাভুক্ত না হলেও ফতুল্লার লালপুর এলাকার প্রায় ৭ লাখ পানি বন্দি মানুষের জন্য পানি নিষ্কাশনে কাজ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনডি মেগা প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহসানুদ তাকবিম চৌধুরী। এ সময় তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো ডিএনডি বাঁধ অভ্যন্তরে ৩৬টি শাখা খাল রয়েছে, যেগুলোর ১০টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নয়। ওই ১০টি খাল সংস্কার বা পুনঃখনন করতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ও ডিমারগেশন (সীমানা নিরূপণ) প্রয়োজন। এই কাজটি হয়ে গেলে সবগুলো শাখা খাল দিয়ে জলাবদ্ধতার পানি শিমরাইল পাম্প হাউজের মূল খালে আসবে। কিন্তু এরই মধ্যে আদমজী নগরের প্রায় ৯শ মিটারের একটি খাল খনন প্রয়োজন, তা না হলে মূল খালে পানি আসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই ওই খালের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে তার মূল্য পরিশোধ করা হলেও এ পর্যন্ত আমাদের খালের জায়গাটি বুঝিয়ে দেয়নি জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ডিএনডি’র প্রজেক্টের জন্য সাতটি আধুনিক পাম্প চালানোর জন্য ডিপিডিসিকে সংযোগ ফি প্রদান করা হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমাদের সংযোগ দিচ্ছে না। আমরা এখন ট্রান্সফরমার দিয়ে চারটি পাম্প চালাচ্ছি। কিন্তু এই সংযোগটি হয়ে গেলে আমাদের সাতটি অত্যাধুনিক পাম্প চালাতে আর কোনো সমস্যা হবে না এবং বর্ষাকালে এই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে আমরা মানুষকে মুক্তি দিতে পারব।

এ সময় প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহসানুদ তাকবিম চৌধুরী সংস্কার করা খালগুলোকে বারবার সংস্কার করতে হচ্ছে বলে আক্ষেপের সুরে জানান, আমরা এক খাল পাঁচ বারও সংস্কার করেছি, পরিষ্কার করেছি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা সেগুলোকে ময়লা ফেলে আবার ভরাট করে ফেলেন। এই অসচেতনতা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ও ডিএনডি মেগা প্রজেক্টের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা করা উচিত বা প্রয়োজন, আমরা সেটা করতে প্রস্তুত রয়েছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com