মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন

কৃতজ্ঞতাবোধ আত্মিক প্রশান্তি বাড়িয়ে দেয়!

রাজু আহমেদ।।
যা পাইনি-চিরকাল সেটার আফসোস করতে থাকলে সুসময় খোয়া যাবে! যা হয়নি অথচ হতে পারতো-তা যিনি দেননি সেখানে আরও বৃহত্তর পরিকল্পনা আছে হয়তো! যা ধরা দিয়েছে তা অসুখ এনেছে আর যা ছুটে গেছে তা কেবল সুখ আনতো-এমন ভাবনা সান্ত্বনার সহায়ক হলেও স্বস্তির নিশ্চয়তাদানের জন্য যথেষ্ট নয়। যা আসেনি-তাতেই কল্যাণ নিহিত ছিল বলেই পাইনি। কিছু কিছু অপ্রাপ্তি প্রাপ্তির মূল্য জানাতে থেকে যায়! পেয়েও যাকে অবহেলা করেছেন সেটাকে না পেলেও আফসোসে দিন খোয়াতেন-এটাই তো মানবধর্ম! প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সেটার মূল্য চুকাতে ভুলে যেতে যেতে বরং অবহেলা বহুগুন করে ফেলি। তখন আদর-কদর উপেক্ষার রঙে বদলে যায়।

কারো জন্য যা কিছু এবং যতটুকু কল্যাণের সেটুকু তার কাছেই আছে। বঞ্চিতের চোখে যা পায়নি সেখানে হয়তো ভিন্নতার সমীকরণ আছে। আমি যা চাইতে পারি, যা পরিকল্পনা করি তার বাইরেও মহাপরিকল্পনাবিদ আছেন। চাইনি কিংবা আশাও করিনি অথচ তিনি দিয়েছেন-এমনটা একজীবনে বহুবার ঘটে। যিনি পরীক্ষা দিয়ে উৎরে নেন। দুঃখের উল্টো পিঠে সুখ লেপ্টে রাখেন। তিনি এতোকিছু দেন যার যোগ্যও আমি ছিলাম না কিংবা কিছু না দিয়েও কল্যাণ রাখেন। আমাদের কৃতজ্ঞতার চেয়ে হাহাকার স্পষ্টভাবে জোড়ালো হয় বলেই অর্থ-বিত্তের মোহে অন্ধ হই! অবাস্তব কল্পনায় গা ভাসাই! যে স্বপ্ন আমার নয় সেখানে দল পাকাই! অথচ কৃতজ্ঞ চিত্ত কখনোই অপূর্ণতার ব্যথা অনুভব করে না। সে প্রশান্তির প্রত্যাশায় ধৈর্যশীল থাকে।

মানুষ হিসেবে আমরা কত দুর্বল, মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় আমার কত সংক্ষিপ্ত আয়ুর অথচ আমাদের লোভ মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে যায়। যার প্রত্যাশা যত বেশি কিংবা যার সন্তুষ্ট হওয়ার ক্ষমতা যত কম সে ততবেশি অসুখী। অকৃতজ্ঞ আত্মা জগতের তাবৎ সম্পদেও তুষ্ট হবে না। সবকিছু পেলেও তার মন ভরবে না! আমরা আমাদের অবস্থানের ওপর তলায় তাকিয়ে আমাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি পরিমাপ করে নিজেকে দুঃখের বেড়িবদ্ধ করি! অথচ আমার চেয়েও মলিন, আমার চেয়েও যোগ্য অথচ ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি যার, আমার চেয়েও শক্তিশালী অথচ অঙ্গহীন কিংবা আমার চেয়েও বুদ্ধিমান অথচ হাসপাতালের বিছানায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে-তার সাথে নিজেকে তুলনা করে শোকরিয়া করি না। আকাশের দিকে মুখ তুলে বলি না, ‘তুমি মহান!’

আমি যে অনেকের চেয়ে ভালো আছি, এই-যে এখনো বেঁচে আছি এই বোধটুকুন পুরোপুরি থাকলে আমি সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজেকে ভালো রাখতে পারি। দিনে চাঁদ চাইলে সেটা পাব? কাজেই সকালে বিকালের প্রত্যাশা করা অন্যায় হবে। যিনি ভাগ্যবিধাতা তিনি উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি কাউকে অঢেল দিয়ে এবং কাউকে কিছুই না দিয়ে পরীক্ষা করেন। এই পৃথিবীটাই হিসাবের শেষ জায়গা নয়! পুরস্কারের জন্য যে অসীমতার পথে যাত্রা সেখানে তিনি ন্যায়-বিচারক। জগতেও তিনি কাউকে চিরকাল দুঃখী আবার কাউকে অবিরাম সুখী-এমন রীতির মধ্যে রাখেন না। সুখ-দুঃখের ভারসাম্য করেই একটা জীবন আবর্তিত হয়।

ক্ষণকালের না পাওয়ার হতাশায় যদি নিজেকে ডুবিয়ে ফেলি, চিন্তার জগৎ সংক্ষিপ্ত করে ফেলি কিংবা ভাগ্যকে বারবার দোষারোপ করি তাতে ক্ষতি নিজেরেই! যতবার নিজেকে শোনাবো-আমি ভালো নাই, ভালো থাকা আমার থেকে তত দূরবর্তী হবে। মানুষকে খাপখাওয়াতে শিখতে হয়। ধৈর্য ধরে বিপদ-আপদে যারা বুকপেতে দাঁড়াতে পারে, যার গাঢ় অন্ধকারেও আশা বাঁচিয়ে রাখে তারাই তো কেবল ভোরের সৌন্দর্য উপভোগের অধিকার পায়! অল্পতে ভেঙে পড়লে, আফসোসে কপাল চাপড়ালে কিংবা ভাগ্যকে দুয়োধ্বনি দিলে কল্যাণ কমে যায় এবং মানসিক অস্থিরতা বাড়ে। আপনার ঘুমন্তকালেও যার পরিকল্পনায় থাকেন তিনি আপনার জন্য যথেষ্ট-এমন ভাবনায় চেষ্টা অব্যাহত রাখলে চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলে জীবনে কিছুই থাকবে না। সংগ্রাম ছাড়া যে সফলতা সেটার মূল্যায়ন মানুষ করতে জানে না!

জীবন সম্পর্কে যতবেশি অভিযোগ থাকবে আপনি ততবেশি অশান্তিতে পতিত হবেন। সর্বত্র খুঁতখুঁতে হওয়া, কেবল অন্যের দোষ খোঁজা, নিজেকে সেরা ও বড় ভাবা, সুযোগ পেলেই কাউকে আঘাত দেওয়া কিংবা আড়ালে নিন্দা করা-এই অপরাধগুলো আপনার জন্য বরাদ্দকৃত শুভের অংশ কেটে নেয়। কারো অধিকার হরণ করলে তা আপনার ভবিষ্যত থেকে টেনে পূরণ করা হয়। কাউকে গালি দিলে আর সে সেটার জন্য দায়ী না হলে সেটা নিজের দিকেই প্রত্যাবর্তন করে! আমরা চোখে যা দেখি তার চেয়ে অধিক আছে যেগুলো দেখি না। কিন্তু যিনি সবকিছু দেখেন তিনি পক্ষপাতদুষ্ট নন। আমি পেলাম না কেন?-এমন অভিযোগ হুটহাট তুলতেই পারি কিন্তু তিনি দিলেন না কেন?-সেটার সপক্ষে তারকাছে বহুবিধ যৌক্তিক কারণ থাকে। তবে তিনি কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নন। কথায় কথায় আমাদের ভাগ্য কাটা যায়! অকৃতজ্ঞতা আমাদেরকে মানসিক ও আর্থিক দীনতায় টেনে নেয়!

অল্পে তুষ্ট হতে পারা, সর্বাবস্থায় কৃতজ্ঞ থাকা এবং সবার ঋণ আদায় করা-আপনাকে সুখী করবে। এই পৃথিবীতে যা কিছু হচ্ছে, যা যা ঘটছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে আপনি। আপনি না থাকলে সকল সৌন্দর্য, দিন-রাতের শোভার চার পয়সা মূল্য নাই। কাজেই অল্পেই ভেঙে না পড়ে, পাননি বলে বিলাপ না করে কিংবা হয়নি বলে হতাশায় না মরে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করুন। আপনার জন্য যা যা কল্যাণের তার সবকিছুই আপনার জন্য বরাদ্ধ আছে। এবার পাওয়ার প্রচেষ্টা দরকার। মানুষের কাছে বিনীত থাকুন, অহংকার-দম্ভ-ঔদ্ধত্য পরিহার করুন, সর্বাবস্থায় কৃতজ্ঞ থাকুন-তবেই জীবনে প্রশান্তি বর্ষিত হবে। অতীতের কার্যকলাপ আপনার আগামী নির্ধারণ করবে। কারো বিশ্বাস ভেঙে, কারো ভরসা কেড়ে ভালো থাকা যাবে না। কারো দীর্ঘশ্বাসে, কারো অভিশাপে না থাকলে কিংবা কাউকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করলে আপনি কোথাও ঠেকে থাকবেন না। যা কিছু আপনার তা শত বাঁধা-বিপত্তি ভেদ করে আপনাকে আলিঙ্গন করবে-বিশ্বাসে অবিচল থাকুন।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution