সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:২২ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে তীব্র শীতে বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা!

লালমনিরহাটে তীব্র শীতে বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: আমন মৌসুমে ভালো উৎপাদন এবং ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় লালমনিরহাটের কৃষকেরা শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে বিপুল উৎসাহে বোরো ধান চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এজন্য জমি সমান করে সার ছিটানো, আগাছা পরিস্কার, চারা রোপনসহ নানান কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাট কৃষকেরা। বোরো চাষে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পাশাপাশি পুরোনো পদ্ধতি গরু দিয়ে জমিতে মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করছে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক ‌কৃষক ইতোমধ্যেই বীজতলার কাজ শেষ করে ধানের চারা রোপণ করা শুরু করেছেন। গত মৌসুমে বাজারে আমন ধানের দাম চাহিদার থেকে বেশি পাওয়ায় এবার বোরো চাষেও আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক উপজেলার অনেক স্থানে আংশিকভাবে ধান-রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। তবে আগামী ৩০শে জানুয়ারির পর পুরোদমে ধান রোপণ কার্যক্রম শুরু হবে। কৃষকদের সহায়তায় বীজতলা ও জমি তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ কার্যক্রমের তদারকি করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।

জেলার একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে , আগাম চারা রোপণ করায় ক্ষেতে ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। আর সারি সারি করে ধানের চারা রোপণ করার ফলে পরিচর্যায় স্বস্তি মেলে। এছাড়া ক্ষেতে রোগ-বালাই কম হওয়ায় অন্যান্য সময়ের ফসল থেকে শতকরা প্রায় ২০ ভাগ উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।

অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। পাশাপাশি কীটনাশক, বীজ, সার ও ডিজেলের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবছর বিঘাপ্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবার আবাদকৃত উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের জাত গুলো হলো ইস্পাহানি সেভেন, এসিআই কোম্পানির বন্ধু, পারটেক্সসের বালিয়া টু, সিনজেন্টাল কোম্পানির হীরা ১২, ব্রাকসিডের সাথী, আফতাব ১০৬, সুপ্রিম সীড কোম্পানির হীরা সিক্স। দেশি জাতের ধানের মধ্যে ব্রি ধান ৭৪, ব্রি ধান ১০০ সহ উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত রোপণ করেছেন কৃষকেরা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানের জমি গুলোতে দেখা যায়, বোরো চারা রোপণের জন্য মাঠ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। কেউ পানির সেচ দিচ্ছেন, কেউ আবার গরুর হাল দিয়ে মই দিচ্ছেন, কেউবা বীজতলা ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেসব জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে , তার সার্বিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচ্ছেন। যেসব কৃষক আমন ধান কাটার পর আলু বা সরিষা চাষ করেননি, তারা আগাম সে সব জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। ইরি বোরো ধানের মধ্যে কৃষি বিভাগের নতুন উদ্ভাবন করা ভ্যারাইটি হাইব্রিড ও উপশী জাতের ধান এবার বেশী করে রোপণ করছেন কৃষকেরা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কৃষক ফজলুল হক (৬৫) জানায়, তিনি এবার ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন। ইতিমধ্যে সবার আগেই জমিতে পানি নিষ্কাসনের সাথে সাথে তিনি ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করতে শুরু করেছেন। গেলো আমন ধানের ভালো ফলন পেয়েছেন তাই এবার বোরো চাষের জন্য একটু আগে থেকেই জমির পরিচর্যা ও বোরো ধান রোপণ করছেন। তবে এবার শৈত্য প্রবাহ সেই সাথে প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়ায় কৃষি শ্রমিকরা তাদের মজুরি কিছুটা বেশি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানান, ১১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে সদর উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন। সেচ সুবিধা থাকায় ও ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা বোরো ধান‌ চাষে অধিক মনোযোগী হয়েছে পড়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com