মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন

৮ বছরেও চালু হয়নি শার্শার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র দুটি

শার্শা (যশোর) প্রতিনিধিঃ যশোরের শার্শা উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র দুটি নির্মাণের আট বছর হয়ে গেলেও সেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে একদিকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গর্ভবতী নারীরা। অন্যদিকে অযত্নে অবহেলায় ভবন ও আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে।

এলাকাবাসী বলছেন, উপজেলাটির গুরুত্ব অনান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি হলেও কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষ। দ্রুত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে প্রায়ই জীবন হারাচ্ছেন গর্ভবতী মা ও শিশু। কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরু হবে।

জানা যায়, মা ও শিশুদের সেবা নিশ্চিত করতে সরকার উন্নয়ন খাতে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৪৭টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালে শার্শা উপজেলার বেনাপোল বন্দর এলাকায় স্থলবন্দর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ২০১৩ সালে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে শার্শার গোড়পাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।

এ অঞ্চলের মানুষ স্বপ্ন ছিল এবার তারা চিকিৎসা সেবা পাবেন। বিনা চিকিৎসায় আর কোনো গর্ভবতী নারীর জীবন ঝরবে না। কিন্তু স্বপ্নের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ হলেও আট বছরেও চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় সেবা মেলেনি। অসুস্থ মানুষের একমাত্র সেবা কেন্দ্র শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু সেখানে গুরুতর অসুস্থ কাউকে নেওয়া হলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা পাঠিয়ে দেন যশোর সদর হাসপাতালে। বেনাপোল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে যশোর পৌঁছানোর আগেই রাস্তায় জীবন হারান অনেকেই। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ।

শার্শার নিজামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার নিতু জানান, গত মাসে তার এক আত্মীয় গর্ভাবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিধিনিষেধের কারণে যানবাহন চলছিল না। মোটরসাইকেলে বসিয়ে যশোর নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

বেনাপোলের বাসিন্দা সংবাদকর্মী আশানুর রহমান জানান, গত মাসে তার মেয়ে গর্ভবতী অবস্থায় তার বাড়িতে ছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে শার্শা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার তাকে যশোর নিতে বলেন। যশোরের ডাক্তাররা তাকে দেখেনি। পরে খুলনা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, বাড়ির কাছেই স্থলবন্দর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু সেটি চিকিৎসকের অভাবে চালু হয়নি। এখানে সেবা পেলে হয়ত মেয়েকে হারাতে হতো না।

বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল লিটন বলেন, এতদিনেও মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র দুটি চালু না হওয়ায় মায়েরাও সেবা বঞ্চিত। গুরুতর অসুস্থরা দূর-দূরান্তে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পথে রাস্তায় জীবন দিচ্ছে। চিকিৎসা কেন্দ্র দুটি চালু করতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা জানান, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র দুটি চালু হওয়া জরুরি। বিষয়টি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ দেখছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শার্শা উপজেলা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, উপজেলায় দুটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আপাতত পাঁচটি করে বেড ও চেয়ার টেবিল সরবরাহ করা হয়েছে। চিকিৎসার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ হয়নি। সরকারের পরিকল্পনা ছিল একসঙ্গে সবগুলো সেবা কেন্দ্র চালু করবে। কিন্তু পদ অনুমোদন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে এতদিন নিয়োগ হয়নি।

তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২০ সালে জানুয়ারিতে আবেদন গ্রহণ শেষ হয়। প্রত্যেক মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে দুই জন চিকিৎসক, দুই জন নার্সসহ মোট ১৮ জন জনবল থাকবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আশা করা যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com