মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ঢাকা: দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে জনপ্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নওগাঁর বর্তমান ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে এই পদে বদলি করা হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে ২২ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাবশালী মহলের তদবিরের মতো গুরুতর অভিযোগ। এই ঘটনার জেরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নওগাঁর ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের নিয়োগের পেছনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সরাসরি তদবির ছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই নিয়োগ চূড়ান্ত করতে মোট ২২ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই নগদ ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ১৬ কোটি টাকা মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল চট্টগ্রামের ডিসি হিসেবে যোগদানের পর বিভিন্ন খাত থেকে ‘আয়’ করে পরিশোধ করবেন বলে সমঝোতা হয়।
সূত্রের দাবি, পরিশোধিত ৬ কোটি টাকার মধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল পেয়েছেন ৪ কোটি টাকা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে দেওয়া হয়েছে ২ কোটি টাকা।
এই নিয়োগে আসিফ মাহমুদ ও তালাত মাহমুদের মতো প্রভাবশালীরাও তাদের নিজস্ব প্রার্থীর জন্য তদবির করেছিলেন। কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসিফ মাহমুদ সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করেন।
এই অভিযোগের পরপরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নাটকীয় পরিবর্তন আনা হয়। সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) হিসেবে বদলি করা হয়, যা প্রশাসনে একটি কম গুরুত্বপূর্ণ বা ‘ডিমোশন পোস্ট’ হিসেবে পরিচিত। এই আকস্মিক বদলিকে প্রশাসনে চলমান ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির ফল হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এমন আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছিল। তখন ‘দৈনিক কালবেলা’ এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তবে তখন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও এবার শেষরক্ষা হলো না।
একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলার শীর্ষ পদে নিয়োগে এমন নজিরবিহীন আর্থিক লেনদেন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনায় প্রশাসনের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে সুশাসন ও স্বচ্ছতা যখন সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত, তখন এমন ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা এই ঘটনার একটি নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্তের দাবি তুলেছেন। তারা মনে করছেন, এই দুর্নীতির শিকড় আরও গভীরে এবং এর সঙ্গে জড়িত সব প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনা না গেলে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ফেরানো কঠিন হবে।