বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:: লন্ডনের হিথ্রো, ব্রাসেলস ও বার্লিন বিমানবন্দরে সাইবার হামলার পর বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে সাইবার সুরক্ষায় নড়েচড়ে বসেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে সতর্কতা জারি করেছে বেবিচক। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরগুলোকে দেওয়া হয়েছে ১০টি বিশেষ নির্দেশনা। সম্প্রতি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বেবিচকের বোর্ডসভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বেবিচকের সদস্য এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহবুব খান (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিমানবন্দরগুলোকে দেওয়া ১০ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পাসওয়ার্ড পুনরায় ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করা; অপরিচিত বা সন্দেহজনক ই-মেইল ও লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা; হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারসহ অন্য সামাজিক মাধ্যমে অবাঞ্ছিত বা সন্দেহজনক লিংক কিংবা অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা; সফটওয়্যার (সিকিউরিটি প্যাচ) ও অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট রাখা; পাইরেটেড বা ক্র্যাকড সফটওয়্যার ব্যবহার না করা; অফিশিয়াল ডিভাইসে ব্যক্তিগত সফটওয়্যার বা অ্যাপস ইনস্টল না করা; মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (এমএফএ) ব্যবহার করা; দাপ্তরিক কাজে বেবিচকের ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করা; গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্তের নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা এবং পেনড্রাইভ স্ক্যান ব্যতিরেকে ব্যবহার না করা।
সাইবার হামলার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ প্রসঙ্গে ওই চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিশ্বের বেশকিছু বিমানবন্দরে সাইবার হামলা হয়েছে। বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিমান পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হলো। এ ছাড়াও সাইবার সিকিউরিটি-সংক্রান্ত যে কোনো উদ্ভূত সমস্যা দেখা দিলে বেবিচকের গঠিত সিএএবি সার্ট টিম, আইটি বিভাগ এবং জাতীয় সাইবার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিমকে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে বলা হয়।
বেবিচকের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, চেক-ইন ও বোর্ডিং সিস্টেম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর সাইবার হামলার ঘটনায় ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিমানবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লন্ডনের হিথ্রো, ব্রাসেলস ও বার্লিন বিমানবন্দর। ওইসব বিমানবন্দরে হামলা হওয়ায় তারা সতর্কতা জারি করে। কিছুদিন আগেও সাইবার হামলাসহ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও অন্য বিষয়ে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সাইবার হামলা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। লন্ডনের কয়েকটি বিমানবন্দরে সাইবার হামলা হলে ফ্লাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এর জের ধরে বাংলাদেশের সব ক’টি বিমানবন্দরে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়। বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে- ২০২০ সালে জারি করা ডিজিটাল নিরাপত্তা (২) বিধিমালার ধারা ৭ (৩) অনুসারে বলা হয়, প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো বা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ডিজিটাল রিসোর্সে তার ডিজিটাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
বৈঠক সূত্র জানায়, সম্প্রতি বেবিচকের ওয়েবসাইট সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। এ কারণে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির জরুরি ভিত্তিতে বেবিচকের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়ন ও তা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য একটি উপযুক্ত এবং অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনার জন্য বলা হয়।
বৈঠকে বলা হয়েছে, বেবিচকের সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত ঝুঁকি মূল্যায়ন করার জন্য অভিজ্ঞ একটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতেই হবে। সভায় এয়ার কমডোর মো. আসিফ ইকবাল (নিরাপত্তা) জানান, বিমানবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো সাইবার ঝুঁঁকি মূল্যায়ন একটি বাধ্যতামূলক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।