বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন

যেসব কারণে প্রস্রাব ঝরে পড়ে এবং এ সমস্যার চিকিৎসা

লাইফস্টাইল ডেস্ক:: প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স। অজান্তে প্রস্রাব ঝরে পড়া সমস্যাটি বয়স্কের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পুরুষের তুলনায় নারীরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা নিজে কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। নারীর ক্ষেত্রে গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, মাসিক, জরায়ু অপসারণ ইত্যাদি কারণে পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি দুর্বল ও ঝুলে পড়ায় এ সমস্যা দেখা দেয়। পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়া, প্রোস্টেট ক্যানসার ইত্যাদি কারণে এটি হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূত্রথলি ও মূত্রনালির পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।

যাদের হতে পারে : যে-কোনো বয়সী মানুষের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স হতে পারে। তবে ঝুঁকি বাড়ার কারণ হলোÑঅতিরিক্ত ওজন; স্নায়ুগত রোগ (যেমনÑ পারকিনসন, স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার, মাল্টিপল স্কে¬রোসিস, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি); অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস; প্রস্রাবের সংক্রমণ; ধূমপান; পারিবারিক ইতিহাস; স্থূলতা, স্মৃতিভ্রষ্টতা ইত্যাদি।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের ধরন : এটি নানা ধরনের হতে পারে। যেমন-

স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স : হাসি, কাশি, হাঁচি বা ভার উত্তোলনের সময় ব্লাডারের ওপর চাপ সৃষ্টি হলে প্রস্রাব ঝরে পড়তে পারে।

আর্জ ইনকন্টিনেন্স : ব্লাডারের অনৈচ্ছিক সংকোচনের কারণে প্রস্রাবের তীব্র তাগিদ অনুভব হয় এবং প্রস্রাব ঝরে পড়ে। অনেক সময় সবেমাত্র মূত্রত্যাগ করেও এই তাগিদ থাকে।

মিক্সড ইনকন্টিনেন্স : স্ট্রেস ও আর্জ ইনকন্টিনেন্স একসঙ্গে থাকলে তাকে মিক্সড ইনকন্টিনেন্স বলা হয়।

ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স : ব্লাডার অতিরিক্ত প্রস্রাবে পূর্ণ হয়ে গেলে অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব ঝরে পড়ে। এটি একটানা অথবা বড় প্রবাহে নির্গত হতে পারে।

ফাংশনাল ইনকন্টিনেন্স : ব্লাডার স্বাভাবিক থাকলেও শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতার কারণে ঠিক সময়ে প্রস্রাব না করলে এ ইনকন্টিনেন্স হয়।

করণীয় : সাইট্রাস ফল, কফি, কার্বনেটেড পানীয় ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। মূত্রবর্ধক ওষুধ যেমন ফিউরোসেমাইড, হাইড্রোক্লোরোথিয়াজাইড, টরসেমাইড, স্পিরোনোল্যাক্টোন ইত্যাদি প্রস্রাব ঝরে পড়ার কারণ হতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট খাবার বা পানীয় গ্রহণের পর সমস্যা বাড়লে তা ত্যাগ করুন। ওষুধের কারণে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গর্ভবতী নারী অনেক সময় স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স হয়। সন্তান প্রসবের পরও কিছু নারীর এই সমস্যা অব্যাহত থাকতে পারে। সন্তান জন্মের ছয় সপ্তাহ পরও উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম : পেলভিক ফ্লোর ও কেগেল এক্সারসাইজ এই সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর। কারণ এসব ব্যায়াম মূত্রনালির নিয়ন্ত্রণকারী পেশিকে শক্তিশালী করে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক পেলভিক ফ্লোর ফিজিক্যাল থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। প্রোস্টেট বৃদ্ধিজনিত ইনকন্টিন্সের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োজনে সার্জারি করতে হতে পারে।

মেনোপজ-পরবর্তী ইনকন্টিন্সের ক্ষেত্রে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ উপকারী। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই উপসর্গ কমে আসে। প্রোস্টেট ক্যানসারের পর ইনকন্টিনেন্সের ক্ষেত্রে সার্জারির পর প্রায় ৬-৮% রোগীর দীর্ঘস্থায়ী ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স থাকে।

পরামর্শ : পানীয় গ্রহণ সীমিত রাখুন, বিশেষ করে যেগুলো ব্লাডারকে উত্তেজিত করে। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেলে উপকার পাওয়া যায়।

লেখক : রেজিস্ট্রার, মেডিসিন ও সহকারী পরিচালক

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com