বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন

মেলান্দহে শিক্ষকের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

জামালপুর প্রতিনিধিঃ জামালপুরের মেলান্দহে সামিউল হক নামে এক শিক্ষকের অন্যের জমি দখল করে স্কুল নির্মাণসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আত্মীয় স্বজনদের জমি দখলেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন প্রশাসন বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলেও প্রতিকার মিলছে না।

জানা গেছে, সামিউল হক চরপলিশা নয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯০ সালে। প্রতিষ্ঠার সময় ওই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনিসহ তার স্ত্রী মেরিনা বেগম, শ্যালিকা মিনারা বেগম, বোন মোর্শেদা আক্তার ও ভগিনীপতি মমতাজুর রহমান। তবে স্কুল জাতীয়করণ করা হলে গেজেটে সামিউল ইসলামের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক মমতাজুর রহমান ১৪ বছর আগে মৃত্যুবরণ করলেও ২০১৬ সালে প্রকাশিত গেজেটে শিক্ষক হিসেবে তার নাম আছে। মৃত মমতাজুর রহমানের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তার স্ত্রী ও একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা বেগম এই প্রতিবেদককে ‘কেন এসব জানতে চাচ্ছেন’ বলে উল্টো প্রশ্ন করেন। একপর্যায়ে তিনি জানান, তার স্বামী মমতাজুর রহমান ১৪ বছর আগে মারা গেছেন।

সামিউল হকের বিরুদ্ধে রাশেদা বেগম নামে এক হতদরিদ্র নারীর জমি দখল করে অন্য একটি স্কুলঘর নির্মাণের অভিযোগ আছে। চরপলিশা পূর্বপাড়া নলেরচর গ্রামের মৃত শহজাহান আলীর স্ত্রী মোছা. রাশেদা বেগম জানান, তার ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখল করে স্কুলঘর তুলেছেন মৃত তোজাম্মেল হকের ছেলে সামিউল মাস্টার।

তিনি জানান, ২০১৫ সালে মৃত করিমুজ্জামান সরকারের ছেলে মো. গুলজার হোসেনের কাছ থেকে ৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। প্রভাবশালী সামিউল মাস্টার তার জমিটি দখল করে বেসরকারি স্কুল নির্মাণ করেছেন।

বিধবা রাশেদা জানান, তিনি ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়ে বাড়ি করার জন্য ওই ৭ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। সামিউল মাস্টার তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমি দখল করায় তিনি অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন।

এছাড়া সামিউল হক রোকনুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে মারধর করার অভিযোগে মামলায় সম্প্রতি কিছুদিন হাজতবাস করেছেন। চরপলিশা গ্রামের মনির হোসেনের ভাই মুক্তাদির হোসেন, মাসুদ রানাসহ অনেকে জানান, তারা সবাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত।

এলাকায় না থাকার সুযোগে তাদের না জানিয়ে সামিউল মৃত নকিব উদ্দিনের ছেলে অসুস্থ মনির হোসেনের বাড়ির ভিটা ও পূর্বপুরুষদের বিক্রি করা জমিজমাসহ অন্তত ১০০টি দাগ নম্বর উল্লেখ করে ৩টি দলিলে অন্তত সাড়ে ৪ একর জমি সামিউল তার নিজ নামেসহ স্ত্রী, শ্যালিকা ও ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে খারিজ করে নেন।

পারিবারিক বণ্টননামা ছাড়াই মনির হোসেনের কাছ থেকে অন্তত ১০০টি দাগের জমি রেজিস্ট্রি করে সামিউল তার পছন্দমতো ৪-৫টি দাগে খারিজ করে নেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এছাড়া সামিউল মাস্টার মনির হোসেনের অন্য সহোদর ভাইবোন ও চাচাতো ভাই মৃত আব্দুল খালেক সরকারের ছেলে গোলাম ফারুক, আব্দুল হালিম সরকারের ছেলে আবু সাঈদ সোহাগ, আবু সিদ্দিক সরকারের ছেলে সোহরাওয়ার্দী সুমনসহ তাদের অন্য আত্মীয়দের জমিও নানা চাতুরি করে দখল করে নামজারি করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পরিবারের লোকজন।

অভিযোগ উঠেছে- প্রতিষ্ঠাকালীন সামিউল হক স্কুলের নামে যে জমিটি দান করেছিলেন, জাতীয়করণের পর সেই জমিতে স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয়নি; ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি খাসজমিতে; যে জমি এক সময় নদী ছিল বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্কুলের নামে দান করা জমিটি নয়াপাড়া গ্রামের এরশাদ নামে এক ব্যক্তিকে সামিউল মাস্টার ১ লাখ টাকায় বন্ধক দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এরশাদ জানিয়েছেন, তিনি স্কুলের জমি নয়, সামিউল মাস্টারের জমি বন্ধক নিয়েছেন।

মেলান্দহ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার গোলাম কিবরিয়া তাপস জানান, চরপলিশা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিউল হকের বিরুদ্ধে মামলা ও হাজতবাসের কারণে সম্প্রতি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্কুলের জমি বন্ধক দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। মোবাইল ফোনে শিক্ষক সামিউল হক জানান, তিনি তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছেন; তবে কারো জমি দখল করেননি। বিধবা রাশেদা বেগমের জমি দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, রাশেদার জমি অন্য দাগে আছে। স্কুলের জমি অন্যজনের কাছে বন্ধক দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।

এছাড়া একই স্কুলে নিজের স্ত্রী, শ্যালিকা, বোন ও ভগিনীপতির চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। চাতুরি করে আত্মীয়স্বজনের জমি নিয়মবহির্ভূতভাবে দখলের অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com