রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
ঢাকা: রাজধানীর গ্রীন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে এক নবজাতককে ‘মৃত’ ঘোষণা করার আট ঘণ্টা পর তাকে ‘জীবিত’ পাওয়ার এক অমানবিক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। এই ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনার শিকার শিশুর নানী তার ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি তুলে ধরে দেশের প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ঘটনার বিবরণ
অভিযোগ অনুযায়ী, গত ০৮.১০.২০২৫ তারিখ দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে গ্রীন রোড সেন্ট্রাল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের বেড নং-১-এ শিশুটির জন্ম হয়। জন্মগ্রহণের পরপরই কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুটির নানী জানান, মৃত ঘোষণার পর পরিবারের সদস্যরা বারবার শিশুটিকে দেখতে চাইলেও ডাক্তার ন্যান্সি ম্যাডামের টিমের সদস্যরা তাদের দেখতে দেননি। এমনকি, রাত ৩টার দিকে একটি ছবি তোলার অনুমতি চাইলেও ডাক্তাররা জানান, লেবার রুমে ছবি বা ভিডিও করা নিষেধ।
বাধ্য হয়ে শিশুটির নানী লুকিয়ে দূর থেকে একটি ছবি তোলেন। তিনি যখন ডাক্তার ও নার্সদের অনুরোধ করেন অন্তত নাড়ী কেটে শিশুটিকে সঠিকভাবে শুইয়ে দেওয়ার জন্য, তখন তারা বলেন, “সকালে কাফনের কাপড় আনলে আমরা ঠিক করে দেব।”
আট ঘণ্টা পর সেই ‘চমক’
এই অমানবিক অপেক্ষার পর, পরদিন সকাল ৮টার দিকে এক ডাক্তার এসে পরিবারকে জানান, “আপনাদের বেবি এখন জীবিত (‘alive now’)।”
পরিবার জানতে চায়, প্রথমে যিনি মৃত ঘোষণা করেছিলেন, সেই ডাক্তার কোথায়? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার ডিউটি শেষ।
তাৎক্ষণিক লেবার রুমে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির হাত-পা নড়ছে এবং সে চোখ মেলে দেখছে! এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করা হয়। একদিন চিকিৎসার পর, ০৯.১০.২০২৫ তারিখে শিশুটিকে ঢাকার অন্য একটি শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সেখানে শিশুটির অবস্থা মোটামুটি ভালো।
প্রশ্ন উঠছে মানবিকতা ও নিরাপত্তার
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও মানবিকতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “হায়রে মানবতা, কোথায় যাবো, আমরা সাধারণ মানুষ হাসপাতালেও নিরাপত্তা নেই।”
ভুক্তভোগী পরিবার এই জঘন্য ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশের আইন-প্রশাসন, সাংবাদিক সমাজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জোর অনুরোধ জানিয়েছে।
এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী জবাব দিয়েছে, গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা তারা জানতে চেয়েছেন।