রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩০ অপরাহ্ন

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট। এসময় বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং অর্থনৈতিক খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করেন।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এই সাক্ষাৎ করেন জোহানেস জুট। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য নবনিযুক্ত বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেসমে।

আলোচনায় জুট বাংলাদেশের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কথা জানান এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তার আগের কর্মকালীন সময় স্মরণ করেন।

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে জুট বলেন, আপনার এবং আপনার চমৎকার টিমকে ভালো কাজের জন্য সাধুবাদ। বিশেষ করে আর্থিক খাতের কিছু অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বিষয় মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা এই যাত্রায় অংশ নিতে প্রস্তুত এবং বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা আমরা ভাগ করে নিই।

গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জুট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যারা সংযুক্ত, তাদের সবার জন্যই এটি এক আবেগঘন মুহূর্ত।

প্রধান উপদেষ্টা জুটের সমর্থন ও প্রশংসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন দৃশ্যটা ছিল যেন ভূমিকম্প-পরবর্তী ধ্বংসাবশেষ। আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবু সব উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এতে আমরা সাহস পেয়েছি, আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, তারা এই জাতিকে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণরা যা করেছে, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে; বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা এবং নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজ আমরা জুলাই নারী দিবস পালন করছি। তাদের ত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আমাদের দেশের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। আমাদের উচিত তরুণদের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মেলানো।

বাংলাদেশকে কেবল একটি ভৌগোলিক সীমানা হিসেবে না দেখতে বিশ্বব্যাংককে আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এর চেয়ে অনেক বড়। বাংলাদেশ যদি উন্নতি করে, তাহলে গোটা দক্ষিণ এশিয়া উপকৃত হবে। বিচ্ছিন্ন থাকলে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা ও পরিবহন খাত উন্নত করতে হবে। আমাদের আছে একটি সমুদ্র, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তিনি আরও বলেন, অনেক দেশেই তরুণ জনসংখ্যার ঘাটতি রয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, তাদের কারখানা আমাদের এখানে নিয়ে আসতে। আমরা শিল্প-কারখানা গড়তে প্রয়োজনীয় সব কিছু সরবরাহ করব।

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নারীর ক্ষমতায়নে অধ্যাপক ইউনূসের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, আমরা আপনাদের পাশে থাকব। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য যে শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি চালু হয়েছিল, তা পরে অন্যান্য দেশেও অনুসরণ করা হয়েছে। আমরা তরুণদের জন্য সুযোগ সৃষ্টিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাব।

তিনি জানান, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ৩ বিলিয়নের বেশি অর্থায়ন করেছে এবং আগামী তিন বছরেও একই ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) সংক্রান্ত সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, নতুন পরিচালন ব্যবস্থার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। আমাদের পরিকল্পনা এটিকে আরও কার্যকর করা। এ ছাড়া ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং শক্তিশালী ইকুইটি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে নেট বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com