মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:: নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আবু হানিফ (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় কয়েকজন যুবক।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত আবু হানিফ খুলনার বাগেরহাটের খন্তাকাটা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি খানপুর এলাকার ‘ইতু ভিলা’ ভবনের দারোয়ান হিসেবে কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ভবনের এক গার্মেন্ট কর্মীর ১১ বছর বয়সী শিশুকে ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে আবু হানিফের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে শিশুটি বিষয়টি মাকে জানায়। পরদিন সোমবার দুপুরে ওই নারী প্রতিবেশীদের জানানোর পর উত্তেজিত স্থানীয় কয়েকজন যুবক হানিফকে খানপুর জোড়া ট্যাংকি এলাকায় নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহতের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে স্থানীয় যুবক অভিসহ কয়েকজন বাসায় এসে আমার স্ত্রীকে গালাগাল করে এবং আমাকে ধরে নিয়ে যায়। জোড়া ট্যাংকির নিচে গিয়ে দেখি, আমার শ্যালক হানিফকে আটকিয়ে মারধর করা হচ্ছে। একপর্যায়ে তারা আমাকে মারধর করে এবং উলঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। পরে হানিফকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। রাতে হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ পাই।
খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাহাদাৎ হোসেন জানান, বিকেল ৩টার দিকে কয়েকজন যুবক গুরুতর আহত অবস্থায় হানিফকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কিন্তু যারা নিয়ে এসেছিল তারা রোগীকে রেখে পালিয়ে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে হানিফের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় কয়েকজন যুবক হানিফকে মারধর করেছে বলে তথ্য পেয়েছি। তার মৃত্যু হয়েছে, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
তিনি আরও বলেন, ওই শিশুর ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে মব বা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। পুলিশ বলছে, যে কোনো অপরাধের অভিযোগে বিচার নিজ হাতে না নিয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।