মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ অপরাহ্ন

নত হওয়া মানে ছোট হওয়া নয়!

রাজু আহমেদ : যদি মনের মধ্যে হিংসা থাকে-যার জন্য হিংসা পোষা হয় তার লাভ/ক্ষতি কী হয় জানি না তবে যিনি হিংসা পোষণকারী তিনি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। মানসিক অস্বস্তি তাকে ছেড়ে যায় না। তিনি কারো সাথে দিলদরিয়া হয়ে মিশতে পারেন না। স্বার্থের বাইরে কেউ তার আপন হয় না। যিনি আমিত্ব নিয়ে থাকেন, যাকে বড়ত্বের ভাবনা ঘিরে রাখে তিনি মানুষের ভালোবাসার গন্ডি থেকে দূরে সরে যান। জনতার সাথে মিশতে, মানুষের সাথে বসতে যারা নাক সিঁটকায় মানুষেরা যে কবেই তাদের বুকের গহীন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিছে-হয়তো তারা সে ব্যাপারেও বেখবর!

তত বড় হতে পারবে যত নত হতে শিখবে। কারো ভালোবাসা পেতে হলে তাকে তাচ্ছিল্য ভরে দেখে, তুচ্ছ করে রেখে কিংবা ক্ষুদ্র ভেবে ছুঁড়ে ফেলা যায় না! প্রত্যেক ক্ষুদ্রত্বের মাঝে এক অপ্রকাশিত বড়ত্ব লুকিয়ে থাকে। সিন্ধুর মাঝে থাকে অসংখ্য বিন্দুর উপস্থিতি! দরদ ভরা কণ্ঠে কথা না বললে, দুঃখের দিনে পাশে না পেলে কিংবা যত্রতত্র অপমান করলে সে তোমায় ভালোবাসবে, তোমার ভক্ত-অনুরক্ত হবে কিংবা তোমার চিন্তায় যুক্ত হবে?-এমন দায় ঠেকেছে কার? তুমি হিংসা ভরে পুছবে না আর সে তোমায় খুঁজে খুঁজে বেলা খোয়াবে, এমন খোওয়াব যেনো ভুলেও না দেখো!

কেউ কারো নয়/সবাই সবার-কোন পক্ষের হবে সেটা কথা, আচরণ এবং প্রতিশ্রুতি জানিয়ে দেবে! একজন স্বার্থপর জগতের সবকিছুকেই স্বার্থ দিয়ে বিচার করে কিন্তু যে মানুষ অনায়াসে ভোগ ভুলে ত্যাগ করতে পারে, কথায় কথায় ছেড়ে দিতে পারে রাজ্য তার কাছে এই জগতের প্রত্যকটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েরও স্বতঃমূল্য আছে। যে ভালোবাসে সে ভালোবাসা পায়। মানুষ ঠকাতে পারে, ব্যথা দিতে পারে আয়োজন করে, ভুল বুঝতে পারে কিন্তু প্রকৃতির নিজস্ব সূত্র আছে। সে বেদনায় বেদনা ফিরিয়ে দেয় আর ভালোবাসার বদলে দেয় স্বস্তি! হেরে যাওয়ার আগেও বারবার বারবার জয়ী হয় কিংবা হারতে হারতে জেতে! যার মন ভালো তার সব ভালো! ভালো মানুষের সাথে নরকও অবাসযোগ্য হয়ে ওঠে! হিংসুটের সাথে স্বর্গেও দাঙ্গা হবে! মনোমালিন্যে মন খারাপ করবে! সুসময়কেও বিষে ভরবে।

একজন হিংসুটে জোর খাটানোর প্রবৃত্তি দেখাতে পারে, দখল করার প্রবণতায় মাততে পারে কিংবা তার মত চাপিয়ে দিতে চায় কিন্তু জয় করার সহজ পথে হাঁটতে চায় না। সে নিজের দিকটা যেভাবে বোঝে সেভাবে অন্যের চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছার খোঁজে না এবং সম্পর্কের মূল্য দিতেও জানে না। কত মান-অভিমান ক্ষোভে পরিণত হয়, কত রাগ পাথরে বদলে যায় কিংবা কত আকুলিবিকুলি করা মন শক্ত হয় সে ব্যাপারে বেখবর থাকলে জীবনের বন্দনা রসকষহীন হয়ে যায়। দেমাগ পুষে রেখে, অহম-দম্ভের বৃক্ষতলে ধ্যান করে কারো মনের খবর কখনোই জানা যায় না। নত হওয়া মানে ছোট হওয়া নয়, নত হওয়া মানে হেরে যাওয়া নয় কিংবা নত হওয়া মানে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া, বিকিয়ে দেয়া নয়-এই বুঝ যতদিনে মানুষের না হবে ততদিন মানুষ অব্যক্তম ভালোবাসার অর্থ বুঝবে না কিংবা মনের ঘরে কী চলছে তার খোঁজ জানবে না! মুখের হাসিতে লোকসমাজের কাছে দায় এড়ানোর, কেই বুঝে ফেলুক সেটা এড়াতে ছদ্মবেশী হওয়া যায়, ধরা না পরার জন্য কৃত্রিমতাও থাকতে পারে-এই বুঝ অবুঝ বোঝে না!

মানুষকে ভালোবাসতে হয় মুগ্ধতার সাথে, অকৃত্রিম পথে। যেখানে সারল্য থাকবে, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি থাকবে কিংবা সীমাবদ্ধতার মাঝেও সর্বোচ্চটা আসবে। অচেনা তবুও দেখা হলে একচিলতে হাসিমুখে বিদায় দেওয়ার কালে একচুলও অবহেলা থাকবে না। পাওয়ার উপলব্ধি আর না পাওয়ার আফসোসের মধ্যে যাতে ভেদ রেখা থাকে-সে কোশিশ রাখতে হয়! পাশাপাশি চলতে হয় তাই চলা, দু’টো কথা বলতে হয় তাই বলা-এ রীতি সুনীতি নয়। দূরে থাকলেও মনে থাকা, কাছে থাকলে যত্নে থাকা-এইতো জীবন, এমন হোক জীবন। হিংসার দেয়ালে, দম্ভের আড়ালে যেনো চাপা না পড়ে মানুষ! যেনো এমন আফসোস না থাকে যার প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ না আসে! মানুষ ভালোবেসে-ভালোবাসায় থাকুক!-আশেপাশে ঘিরে রাখুক।

রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।
raju69alive@gmail.com

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com