শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ বাগেরহাট শহরের পূর্ব বাসাবাটি এলাকায় ড্রেন নির্মাণের কথা বলে বালু ফেলে প্রবাহমান খাল ভরাটের ঘটনা ঘটেছে। খাল ভরাটের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি এক মাস ধরে খালটি বন্ধ থাকায় গোসল-পয়ঃনিষ্কাশনসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানি স্থানীয়দের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, বাগেরহাট পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মাণের কথা বলে খালে বালু ফেলেছেন। তবে কাউন্সিলর বলছেন, নাব্যতা হারিয়ে খালটি মরে যাওয়ায় ড্রেন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে। তবে বালু অপসারণ করে খালটিকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদী থেকে রহমাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক ঘেঁষে পূর্ববাসাবাটি এলাকায় প্রবেশ করা খালটি স্থানীয়দের কাছে পূর্ববাসাবাটি খাল নামে পরিচিত। খালটি গড়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট চওড়া এবং ৭ থেকে ১০ ফুটের মতো গভীর ছিল। কিন্তু দুই পাড়ের মানুষদের দখল ও এলাকাবাসীর ফেলা ময়লায় খালের বেশিরভাগ অংশ মৃতপ্রায়। দীর্ঘ দিন ধরে এই অবস্থা থাকলেও খালটি খননের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এদিকে মাস খানেক আগে বাগেরহাট পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মাণের কথা বলে খালের বেশিরভাগ অংশ বালু ফেলে ভরাট করে ফেলেছেন। এক মাসেও খালে ড্রেন নির্মাণ বা পুনঃখননে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে পূর্ববাসাবাটি এলাকায় দেখা যায়, রুবেল নামে এক যুবক বালুর মধ্যে কোদাল দিয়ে লাইন করার চেষ্টা করছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে জানান, এক মাস ধরে গোসল, খাওয়া, টয়েলেটের পানি সবকিছু আটকে রয়েছে আমাদের। গন্ধে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বালু তুলে পাইপের মুখ বের করার চেষ্টা করছি। এভাবে কিছুদিন থাকলে এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
একই এলাকার বৃদ্ধ মুনছুর আলী শেখ বলেন, কয়েক যুগ আগে জমি ক্রয় করে এই এলাকায় বাড়ি করেছি। তখন থেকেই এই খালটি দিয়ে বৃষ্টির পানিসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু এক মাস আগে স্থানীয় কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মাণের কথা বলে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে আমাদের খালটি বন্ধ করে দেয়। খাল বন্ধ করায় এখানে আর বসবাসের পরিবেশ নেই। খুবই বিপদের মধ্যে আছি আমরা।
স্থানীয় আরেকজন বলেন, ১০ বছর আগেও এই খালে সাঁতার কেটেছি, মাছ ধরেছি। তবে দীর্ঘদিনের অবহেলায় খালটির করুণ দশা। আর এখন তো বালু ফেলে এর অস্তিত্বই শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই দ্রুতই খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।
খাল খনন করা না হলে বর্ষায় ঘরের মধ্যে দুই-তিন ফুট পানি জমে যাবে বলে জানান সুফিয়া বেগম। তিনি বলেন, ড্রেনের দরকার নেই। এই খাল যেমন ছিল, তেমন চাই আমরা। খালের পানি দিয়ে আমরা থালাবাটি, মাছ-তরকারি পরিষ্কার, বৃষ্টির সময় বাচ্চাদের গোসলসহ সবই করতাম। বর্ষা আসার আগে এই খাল খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, যে পাশ থেকে খালটি ভরাট করা হয়েছে, ওই পাশেই রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি জমি ক্রয় করে প্লট আকারে বিক্রি করছেন। মূলত ওই জমিতে যাওয়ার রাস্তা তৈরির জন্যই এই খালটিকে ভরাট করা হয়েছে।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম বলেন, খালটি তার নাব্যতা হারিয়েছিল। দুই পাড়ের মানুষের বর্জ্যে খালটি এত নোংরা হয়েছিল যে কোনো শ্রমিক নামতে রাজি হচ্ছিল না। যার কারণে খালটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে খুব দ্রুতই এখানে ড্রেন নির্মাণ শুরু করা হবে।
খাল ভরাট করে ড্রেন নির্মাণ আইনগতভাবে বৈধ কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, খাল তো স্থায়ীভাবে ভরাট করা হচ্ছে না। এখানে ড্রেন নির্মাণ করা হবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, খালে বালু ভরাটের বিষয়টি আমরা জেনেছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার খালটি পরিদর্শন করেছেন। কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিমকে তিন দিনের মধ্যে খালটিকে আগের স্থানে ফিরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তিনি যদি খালটি পুনঃখনন না করেন, তাহলে ম্যাপ অনুযায়ী খালটি পরিমাপ করে পুনঃখননের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি যিনি খাল ভরাট করেছেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।