মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

এশিয়ান আরচারিতে ঠাকুরগাঁওয়ের টং দোকানির মেয়ের নিশানায় বাংলাদেশের সোনার স্বপ্ন

এশিয়ান আরচারিতে ঠাকুরগাঁওয়ের টং দোকানির মেয়ের নিশানায় বাংলাদেশের সোনার স্বপ্ন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঢাকায় চলমান ২৪তম তীর এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে যেখানে একের পর এক বাংলাদেশের সব আরচার হতাশায় ডোবাচ্ছেন, সেখানে একমাত্র আশার আলো ধরে রেখেছেন বিকেএসপির এই তরুণী। কে বলবে এটা কুলসুমের মাত্র চতুর্থ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা! ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর কুলসুম অংশ নেন মেয়েদের কম্পাউন্ড এককে। প্রতিযোগিতার সেরা সেরা আরচারদের হারিয়ে উঠে গেছেন সেমিফাইনালে। সোনার পদক আর কুলসুমের মাঝে এখন শুধু দুই ম্যাচের দূরত্ব।

ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণী কুলসুম প্রথম রাউন্ডে বাই পেয়েছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে তিনি হারিয়ে দেন ইরানের ফাতেমি বাঘেরিকে। এরপর তৃতীয় রাউন্ডে হারিয়েছেন টুর্নামেন্টের শীর্ষ র‌্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড় ভারতের দীপশিখাকে। কোয়ার্টার ফাইনালে কুলসুম জেতেন কাজাখস্থানের রোকসানা ইউনুসোভার বিপক্ষে।

বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর সেমিফাইনালে কুলসুম মুখোমুখি হবেন ভারতের প্রীথিকা প্রদীপের। বিকেএসপির দশম শ্রেণীর ছাত্রী কুলসুমের আরচ্যারিতে হাতেখড়ি ২০২৩ সালে। ফিটনেস ভালো থাকায় কোচ নূর আলম তাকে কম্পাউন্ডে ভর্তি করে নেন। শুরুর দিকে মোটেও ভালো স্কোর হতো না। কুলসুম বলেন, “আমি জানতামই না কোনটা রিকার্ভ, কোনটা কম্পাউন্ড। স্যার যেটা দিয়েছেন সেটা নিয়ে শুরু করেছি।

প্রথমে ভালো স্কোর হতো না।” তবে গত বছর জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন কুলসুম। এরপর থেকেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে তার। জুনিয়র ইন্টারন্যাশনাল স্কুল গেমে ২০২৪ সালে অংশ নেন বাহরাইনে। সেখানে ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচে হেরেছিলেন। এরপর সিঙ্গাপুরে এশিয়া কাপে ও কোরিয়াতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন। আগে কোথাও পদক জেতেননি। তবে এবার প্রথম স্বপ্ন দেখছেন পদক জেতার, “ইনশাল্লাহ দেশের জন্য কিছু একটা করা সম্ভব। যদিও প্রত্যাশা করিনি সেমিফাইনালে উঠব। কারণ কখনও ভাবিনা যে আমাকে জিততে হবে।

আল্লাহ যদি সহায় থাকে সবটা দিয়ে চেষ্টা করব সোনা জিততে।” কিন্তু তার আগে কুলসুমকে পার হতে হবে সেমিফাইনালের হার্ডল। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারীদের বেশিরভাগ সাফল্য রিকার্ভে। এবারই প্রথম কম্পাউন্ডে আশার আলো দেখাচ্ছেন কুলসুম।

বাংলাদেশের আট-দশটা খেলোয়াড়দের মতোই উঠে আসার গল্প কুলসুমের। বাবা ওসমান গণির নুন আনতে পানতা ফুরনোর মতো অবস্থা। ঠাকুরগাঁও বাস স্ট্যান্ডে টং দোকানে চা-বিস্কুট বিক্রি করেন ওসমান গণি। ঠাকুরগাঁওয়ের ছোট্ট এক চা দোকান থেকে শুরু করে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত কুলসুম আক্তার মনির পথচলা যেন প্রমাণ করে স্বপ্নের পথে আর্থিক সীমাবদ্ধতা কোনো বাধা নয়। পুরো দেশ এখন তাকিয়ে আছে বিকেএসপির এই তরুণীর দিকে। যিনি নিজের তীরের নিখুঁত নিশানায় হয়তো বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের নারী আরচ্যারির কম্পাউন্ড বিভাগের ইতিহাস।

সেখান থেকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে যখন এখানে সালন্দর হাইস্কুলে পড়তো তখন থেকেই খেলাধুলায় আগ্রহী ছিল। আমি তাকে সব সময় সমর্থন দিয়েছি। আমি চাই মনি যেন বাংলাদেশের হয়ে পদক জিততে পারে।” দুই বোন ও এক ভাই কুলসুমদের। কিন্তু অন্য কেউ খেলাধুলা করেন না। তবে জানালেন, পরিবারের সবার সমর্থনে এতদূর এসেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com