মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪৭ অপরাহ্ন

উলিপুরে ব্রিজ ভেঙে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ, দেখার কেউ নেই

মো: জাহিদ, ‎কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: ‎কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৮ বছর ধরে ব্রিজ ভেঙে পড়ে আছে, দেখার কেউ নেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ।

‎জানা গেছে, উপজেলা শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে তবকপুর ইউনিয়নের বড়ুয়া তবকপুর বাজারগামী পাকা সড়ক। এই সড়ক ধরে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে বড়ুয়া তবকপুর বাজার। বাজারের কাছে পাকা সড়কের ওপর নির্মিত ব্রিজটি ভেঙে যায় আট বছর আ‌গে। ২০১৮ সালের বন্যায় পানিতে পিলার ভেঙে ব্রিজটি উল্টে যায়। সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশাল গর্তে ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই থেকে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্কুল শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ। দীর্ঘ আট বছর ধরে চলা ভোগান্তি নিরসনে এগিয়ে আসেনি কেউ। নারী-শিশু কিংবা রোগী কারও ভোগা‌ন্তি বি‌বেচনায় নেয়‌নি কেউ। এ নিয়ে হতাশার সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

‎স্থানীয়রা জানান, উপজেলার শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে বড়ুয়া তবকপুর হয়ে ইউনিয়নের রসুলপুর চুনিয়ারপার মোড় পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার পাকা সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নির্মাণ করেন। সড়কের পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব অংশে বড়ুয়া তবকপুর বাজারের কাছে নির্মিত ব্রিজটি তৈরির চার বছর পর ২০১৮ সালে বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে যায়। এরপর থেকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয়রা জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।

‎সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝে যেন বিশাল ‘পুকুর’ সৃষ্টি হয়েছে। দুই পাশে আবাদি জমি বিলীন হয়েছে প্রায় এক একর। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বিভিন্ন যানবাহনে করে মানুষজন এসে ব্রিজটির উত্তর প্রান্তে নামছেন। কেউ ড্রা‌মের ভেলা ক‌রে আবার কেউ কৃ‌ষিজ‌মির আইল ধ‌রে অপর প্রা‌ন্তে পৌঁছা‌চ্ছেন। এরপর অবশিষ্ট পথ হেঁটে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। নারী-পুরুষ, শিশু কিংবা ব্যবসায়ী সবাইকে একই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যানবাহনহীন পরবর্তী তিন কিলোমিটার পথে ভোগান্তি আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় সবার।

‎শিক্ষাথী আরিফ হোসেন বলেন, যখন বেশি পানি হয়, তখন ভয় লাগে কখন জানি পানিতে পড়ে যাই। মাঝে মাঝে স্কুলে যাই না।

‎স্থানীয় রাহেনা বেগম (৫৫) বলেন, ব্রিজটি কয়েক বছর ধরি এ ভাঙ্গি পরি আছে, কাইয়ো দেখে না। গর্ভবতী ও অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করি নিয়ে যাওয়া লাগে। অনেকেই আবার বেশি অসুস্থ হয়। হামার ব্রিজটি ভালো করি দেন।

‎বড়ুয়া তবকপুর এলাকার শহিদুর রহমান (৬০) বলেন, কিভাবে ব্যবসা করমো, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় মালামাল নিয়ে যাওয়া সমস্যা হচ্ছে। কয়েক দিন যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে গেছি।

‎অটোচালক আমিনুল ইসলাম বলেন (৫০) আট বছর ধরে ব্রিজটি ভেঙে পড়ে আছে। চলাচল করা যায় না। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। লোকজন পারাপারে সমস্যা হয়। মালামাল পরিবহন করতে পারে না। একজন যদি অসুস্থ হয় তার চিকিৎসা করাতে একটা যে অ্যাম্বুলেন্স আসবে, সে উপায়ও নাই। ১৫-১৬ কিলোমিটার ঘুরে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লাগে। তখন ওই রোগীটার কী অবস্থা হয় বোঝেন।’ সবাই আসে আর দেখি যায়। ব্রিজটি ভালো করি দেয় না।

‎শাহাজাহান মিয়া কাছু (৬০) বলেন, ব্রিজটি আট বছরের বেশি সময় ধরে এই ভোগান্তি। ব্রিজটি হইলে আর সমস্যা থাকে না। দুই পাশে পাকা রাস্তা। খালি ব্রিজটি ঠিক হইলে হয়। প্রতিদিন মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। এমন একটা অবস্থা যে এই পাশে আসলেও কষ্ট, ওপাশে গেলেও কষ্ট। ব্রিজ থাকলে গাড়ি চলতো। এত বছর ধরে সেতুটা ভেঙে পড়ে আছে। দেখার কেউ নেই, ভোগান্তি শেষ হয় না।’

‎স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এই পথে তবকপুর, চিলমারীর থানাহাট ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত করে।২০১৮ সালে এটি ভেঙে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান, এমপিসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্রিজটি নির্মাণসহ সড়কের অংশটি মেরামতের জন্য অনেক চেষ্টা-তদবির করা হয়েছে। এই সড়ক ধরে আমার স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের যেতে হয়। ড্রামের ভেলা দিয়ে চলাচল করতে হয়। আজ আট বছর ধরে এই ভোগান্তি চলছে।

‎উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার জানান, নতুন করে ব্রিজটির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা জানান, ব্রিজটি সাপোর্টিং রুরাল ব্রীজ প্রকল্পে ডিপিপি ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে এটার অনুমোদন পাওয়া যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com