বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
মো: জাহিদ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের উলিপুরে টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা নদীর পানি। এতে চরাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল।
অপরদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন। এ অবস্থায় তিস্তা পাড়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। এছাড়া বিভিন্ন খাল, ডোবা ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকের আমন ধান, বীজ বাদাম, মরিচ ও বেগুন সহ বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে হঠাৎ বন্যায় তিস্তার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও থামেনি দুর্ভোগ। তবে তারা দাবি করেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমাদের চরাঞ্চলবাসিকে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিতে নিমজ্জিত ৫০ হেক্টর ফসলি জমি। এছাড়া মাসকলাই ১৫ হেক্টর, বীজ বাদাম ৫ হেক্টর ও শাকসবজি ২ হেক্টর।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদী বেষ্টিত উপজেলার থেতরাই, গুনাইগাছ, দলদলিয়া ও বজরা ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ারের চর, জুয়ান সতরার চর, হোকডাঙ্গার চর, আমনিয়াসার চর, কর্পূরের চর, গাবরের চর, অর্জুন চর, চাপরার চর, দামার হাট, টিপমার চর, বজরার চর ও সাতালস্কার সহ বিভিন্ন চরগুলোতে পানিতে হাজার হেক্টর আবাদি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে আমন ধান, বীজ বাদাম, বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এসব এলাকার কৃষকেরা। একদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় খরা স্রোতে তিস্তার তীব্র ভাঙ্গনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন মানুষজন। তারা নিরুপায় হয়ে ফলন বিহীন আমন ধান কেটে নিয়ে আসছেন। তিস্তার চরাঞ্চলে হাজার হাজার হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি নিয়ে অন্যত্রে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন।
চর গোড়াইপিয়ার এলাকার নুর ইসলাম বলেন, এবারে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দেড় একর জমিতে পেঁয়াজ, আলু, মুলা ও লালশাক চাষাবাদ করেছি। দু’দিনের বন্যার পানি আমাকে সব শেষ করে দিয়েছে। ধার দেনা করে এ চাষাবাদ করেছি কিভাবে ধার দেনার টাকা পরিশোধ করবো। ভাঙ্গনে এক একর ত্রিশ শতক আমন ধানের ক্ষেত সহ জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
দক্ষিণ দলদলিয়া লাল মসজিদ এলাকার আব্দুল করিম বলেন, অর্জুনের চরে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে বীজ বাদাম এবং ৪০ শতক জমিতে আমনের চাষ করেছি। মঙ্গলবার সকালে এসে দেখি তালের উপর পানি উঠেছে। আমার স্বপ্ন বন্যার পানি খেয়ে নিলো। কিভাবে অভাবি সংসার চালাবো, চিন্তা করে পাচ্ছিনা।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোশাররফ হোসেন জানান, বন্যার ফলে চরাঞ্চলের অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা আসলে তাদের দেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।