মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

উলিপুরে থামছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নীরব প্রশাসন

‎কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: ‎কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারিভাবে বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও প্রভাবশালী মহল সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে এই বালু উত্তোলন এবং কোটি কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য করে যাচ্ছে। অজ্ঞাত কারণে প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

‎জানা গেছে, উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে একটি প্রভাবশালী চক্র রাতের আধারে বালু উত্তোলন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। রীতিমত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ব্রহ্মপুত্র থেকে বালু উত্তোলন করে বালুর পাহাড় গড়ে তুলেছে বালু খেকো ওই চক্রটি। ফসলি জমি লিজ নিয়ে সেই বালুর পাহাড় সমান স্তূপ কেটে কেটে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দিবা-রাত্রি নির্বিঘ্নে। এতে স্থানীয় মানুষজনের রাত্রিকালীন বিশ্রাম ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় আধা কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক দিয়ে দিনরাত অবিরাম বালুর গাড়ী যাতায়াতে রাস্তাটি বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। সেখানে অটোরিকশার যাত্রি ও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারছে না। ওই রাস্তা দিয়ে সাইকেলেও যাতায়াত করা অনেক কষ্টের। বেহাল রাস্তা দিয়ে বালুর ট্রাক্টর যখন যায়, তখন ট্রাক্টরের বিকট শব্দে স্থানীয় মানুষের রাতের ঘুম যেন হারাম হয়ে যায়। এছাড়াও বালু উত্তোলনের কারণে ফসলি জমিসহ ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ভাঙনের ঝুঁকি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙ্গে সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।

‎স্থানীয়দের অভিযোগ, হাতিয়ায় সরকারি কোন বালু মহাল না থাকলেও আওয়ামী শাসন আমল থেকেই অনন্তপুরে নিরিবিচ্ছিন্ন বালু খেকোরা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে পূরনো ওই চক্রের সাথে নতুন কিছু যোগ হয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন দাপটের সাথে চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) বালু ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ৩ জনকে আটক করে আবার ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ধারণা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নিবিঘ্নে অবাধে বালুর ব্যবসা চালাচ্ছে চক্রটি।

‎নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, রাতের বেলা ট্রাক্টরের বিকট শব্দে আমাদের জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। সকাল-সন্ধ্যা কিংবা রাতে শব্দ দূষনের কারণে শিক্ষার্থীদেরও লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও নদীসহ পরিবেশ রক্ষায় স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

‎উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম মেহেদী হাসান জানান, ওইদিন ভ্রাম্যমান করার সময় বালুর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। বালু পরিবহনের খালি গাড়ি থেকে ড্রাইভারসহ হেলপারদের আটক করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান করার মতো কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তারা আর কখনো অবৈধ বালু আনা-নেয়া করবে না মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

‎এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করার বিষয়টি মোটেও সত্য নয়। আমরা ইতিপূর্বে বহুবার ভ্রাম্যমান করেছি, এখনো ভ্রাম্যমান অব্যাহত রয়েছে। তিন জনকে আটক করে ছেড়ে দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসিল্যান্ড যখন অভিযানে যায়, তখন তার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা থাকে। এটি একান্ত ওই ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ার। তিনি তার বিচারিক বিবেচনায় ছেড়ে দিতে পারেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com