মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

উলিপুরে চরাঞ্চলে যাত্রী-রোগী ও কৃষিপণ্য পরিবহনে ভরসা শুধু ঘোড়ার গাড়িতে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: ‎কুড়িগ্রামের উলিপুরে চরাঞ্চলের মানুষের কৃষিপণ্য পরিবহনে ও অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বাহন হিসেবে একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়িচালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছে এক চর থেকে আরেক চরে।

‎জানা গেছে, উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত হাতিয়া, সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ ও তিস্তা নদীবেষ্টিত থেতরাই, দলদলিয়া, বজরা ইউনিয়নের অসংখ্য চরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে চোখে পড়ে শুধুই বালুচর। প্রত্যন্ত এ অঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি চালানো জীবিকা নির্বাহের নতুন এক উপায় হয়ে উঠেছে অনেকের। বর্ষা মৌসুমে চরের মানুষ নৌকায় যাতায়াত করতে পারে। তবে রাস্তাঘাট না থাকার কারণে শুকনো মৌসুমে চরম বিপাকে পড়তে হয় তাদের। এ ঘোড়ার গাড়িই মুক্তি দিয়েছে যাতায়াতের এ সমস্যা থেকে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের কৃষিসহ নিত্যপণ্য পরিবহন করছেন ঘোড়ার গাড়িতে। অসুস্থ রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে এ গাড়ি। চরাঞ্চলের মানুষের অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমও হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি।

‎সরেজমিনে চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি ঘোড়ার গাড়িতে তোলা হচ্ছে সারের বস্তা। নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল ছাড়াও মানুষ যাতায়ত করে এই গাড়িতে। চরাঞ্চলে বন্যায় পলি পড়ায় সকল ধরনের ফসল চাষের উপযোগী হয়ে উঠেছে। আলু, বাদাম, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি চাষ করছেন চাষিরা। এসকল চাষাবাদের জন্য বীজ, সার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিভিন্ন চরাঞ্চলে নেয়ার জন্য ঘোড়ার গাড়িতে করে বহন করা হচ্ছে। চালকরা সারাদিন পণ্য পরিবহনে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন। যা আয় হয়, তা দিয়ে ঘোড়ার খাবার ও জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

‎উপজেলার গোড়াইপিয়ার চরাঞ্চলের ঘোড়ারগাড়ি চালক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে সবসময় বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়ে থাকে। আলু, পেয়াজ, রসুন সহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হচ্ছে। ঘোড়ার গাড়িতে ঘাটে পৌঁছানো প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা করে নেই। আবার ঘাট থেকে বিভিন্ন চরাঞ্চলে মালামাল ওই দামেই পৌঁছে দেই। এভাবে দিনে প্রায় ৫০ বস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন চরাঞ্চলে আনা নেয়া করা হয়। এতে প্রতিদিন আয় হয় ১ হাজার থেকে ১৫’শ টাকা। ঘোড়ার খাদ্যে প্রতিদিন খরচ হয় ৩শ ৫০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সহ পরিবারের খরচ চালাই।


এছাড়াও বিভিন্ন চরাঞ্চলের ঘোড়ার গাড়ি চালক ওবায়দুল, জিয়ারুল ইসলাম, আজিত মিয়া ও আসাদুল ইসলাম সহ আরও অনেকে বলেন, তিস্তার চরে শুকনো মৌসুমে ৪-৫ মাস চলে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে পবিহনের কাজ। মে মাসের মাঝামাঝি তিস্তা নদীতে পানি এলে বন্ধ হয়ে যায় ঘোড়ার গাড়ি। তখন থেকে তারা আবার অপেক্ষায় থাকেন কবে তিস্তা নদী শুকিয়ে যাবে।

‎চরাঞ্চলের আলু চাষি আলমগীর মিয়া জানান, এবারে আগাম আলুর চাষ করেছেন সাড়ে তিন একর জমিতে। প্রায় ৩’শ বস্তা আলু ঘাট থেকে ঘোড়ার গাড়ি করে চরাঞ্চলে নিয়ে এসেছেন। তিনি আরও জানান, ঘোড়ার গাড়ি পরিবহণ খরচ বস্তা প্রতি ৫০ টাকা করে দিয়েছি। চরে তো কোনো রাস্তা-ঘাট নাই। কৃষি পণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির কোনো বিকল্প নেই। ঘোড়ার গাড়ি একমাত্র ভরসা আমাদের।

‎এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার চরের মানুষের কাছে ঘোড়ার গাড়ি যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে এসব এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার ঘোড়াগাড়ি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এতে করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com