রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ॥
রাজধানীর উত্তরায় একাধিক আবাসিক হোটেলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক বিশাল অপরাধ চক্র। মাদক, জুয়া এবং নারী দেহব্যবসার মতো অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে এসব হোটেলে, কিন্তু প্রশাসন যেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এর ফলে এলাকায় অপরাধের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হোসাইন টাওয়ারের ওপরের ‘হোটেল রয়েল ব্লু’, হাউজ বিল্ডিংয়ের উত্তর পাশে ‘হোটেল নাইস ব্লু’ এবং পল ওয়েল মার্কেটের ওপরের একটি আবাসিক হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এসব অবৈধ কার্যক্রম। এসব হোটেল এসি/নন-এসি কক্ষের অফার দিয়ে ছোট ছোট কার্ডের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা প্রচার করে। কার্ডে সাধারণত হোটেল বা গেস্ট হাউসের কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে না, শুধু এলাকার নাম আর একটি বা দুটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা থাকে।
প্রতারণার ফাঁদ: যৌন ব্যবসার কৌশল
কার্ডে দেওয়া নম্বরে ফোন করলে তারা গ্রাহককে কৌশলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলে। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় এক ব্যক্তি তাকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুরে আসতে বলেন। সেখানে পৌঁছালে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি কক্ষে, যেখানে ১৫-২০ জন বিভিন্ন বয়সী মেয়েকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেই ব্যক্তি গ্রাহককে সরাসরি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে সারারাত থাকার প্রস্তাব দেন। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি বা যে শহরের চান সব আছে।’
প্রভাবশালীদের ছায়া
প্রকাশ্যে এমন অপরাধমূলক কাজ চালানোর পরও কেন কেউ বাধা দেয় না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সেই ব্যক্তি বলেন, ‘সবকিছু ম্যানেজ করা থাকে।’ তিনি জানান, তাদের পেছনে ‘বড় ভাই’ আছে, কিন্তু তাদের নাম প্রকাশ করেন না। এদের কাজ মূলত যৌনকর্মীদের দালালি করা। তারা কখনও সরাসরি হোটেলে নিয়ে যায়, আবার কখনও বাসায়ও ‘সাপ্লাই’ দেয়।
শেল্টার দেয় ‘বড় ভাইরা’
কার্ড বিলি করার সময় কয়েকজন যুবক প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং তাদের ‘ডিস্টার্ব’ না করার জন্য হুমকি দেয়। এই সময় আরেকজন এসে তাদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘এখানে তোদের কেউ কিছু বলবে না। নির্ভয়ে কার্ড দিয়ে যা।’
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, প্রতিদিন ৪-৫শ’ টাকার বিনিময়ে ১০-১৫ বছর বয়সী কিশোর থেকে শুরু করে অনেক যুবক এই কার্ড বিলির কাজে যুক্ত আছে। তাদের অসুবিধা হলে ‘বড় ভাইরা’ শেল্টার দেন। এসব কার্ডে যাদের নাম উল্লেখ থাকে, তারা মূলত দালাল। আর এই দালালদের যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের নাম কেউ প্রকাশ করতে চায় না। এই নীরবতা থেকে বোঝা যায়, এই চক্রের পেছনে একটি শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী মহল জড়িত, যাদের প্রভাবে প্রশাসনও কার্যত নিষ্ক্রিয়