শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন

আশুলিয়ায় স্কুল মাঠ রক্ষার্থে এলাকাবাসির বিক্ষোভ

তুহিন আহামেদ, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার নানামূখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরাতন ভবন নতুনে পরিণত হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষের যেমন আনন্দের বিষয় তেমনি এলাকাবাসিরও। তবে এলাকাবাসির বাদ সাধে তখন, যখন মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণ শুরু হয়।
সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১৪নং পূর্ব গাজীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাকার্যক্রম স্বাচ্ছন্দ্যে পরিচালনার জন্য বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে নতুন এ ভবন নির্মাণ নিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা আর ক্ষোভ। এরই মধ্যে বিক্ষোভ করেছে ভবন নির্মানাধিন ভবন পূর্ব পাশ থেকে সড়িয়ে দক্ষিণ পাশে নেওয়ার জন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে এবং এরইমধ্যে নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হয়েছে। তবে এব্যাপারে এলাকাবাসি কোন কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর এমন স্থানে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে ভবন নির্মিত হলে স্কুলের মাঠের পরিধি কমে যাবে। সেই সাথে এলাকাটিতে বসবাসরত প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের ঈদের নামাজ, কেউ মারা গেলে জানাযা’র নামাজ ও শিশুদের খেলাধূলার জন্য যে জায়গায় প্রয়োজন তা থাকবে না।
এলাকাবাসি জানান, স্কুলে নতুন ভবন হচ্ছে এটা এলাকাবাসির জন্যে আনন্দের। তবে এলাকাবাসির নামাজের স্থান, কেউ মারা গেলে জানাযা পড়ানোর মাঠ ও শিশুদের খেলার মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে এটা অনুচিত। তবে ভবনটি পূর্ব পাশে না হয়ে দক্ষিণ পাশে হলে খেলার মাঠ যেমন সুরক্ষিত থাকতো তেমনি এলাকাবাসি পড়তে পারবে ঈদের নামাম ও জানাযার নামাজ। কিন্তু সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এলাকাবাসির সাথে না বুঝে পূর্ব পাশেই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার এবং ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুল হক খান জানান, এ এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বসবাস করে। বছরে দুটি ঈদ। ঈদের নামাজ পড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে এ মাঠ ব্যবহার করে আসছি। এছাড়া এলাকার কেউ মৃত্যবরণ করলে তার জানাযার নামাজও এ মাঠেই পড়ানো হয়। সেই সাথে এলাকার ছেলে-মেয়েদের খেলাধূলা করার জন্য এ একটি মাত্র মাঠই রয়েছে। কিন্তু পূর্ব গাজীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের কাজ এসেছে। যার কিছুই আমরা জানিনা। ভবনের কাজ এসেছে এটা ভাল কথা। তাই বলে এলাকাবাসির ক্ষতি করে ভবন নির্মাণ করা হবে এটা অনুচিত।
তিনি জানান, স্কুলের দক্ষিণ পাশে ভবন নির্মাণ করার জন্য যথেষ্ট জমি রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এলাকাবাসির অসুবিধা করে তা পূর্ব পাশেই করা হচ্ছে। পূর্ব পাশে ভবন করা হলে ঐতিহ্যবাহী এ মাঠটি আর থাকবেনা। এখানে আর এলাকাবাসি ঈদের নামাজ পড়তে পারবেনা। পড়তে পাড়বেনা জানাযার নামাজও। সেই সাথে এ এলাকার ছেলে-মেয়েরাও স্বাচ্ছন্দে খেলাধূলা করতে পারবেনা। খেলাধূলা করতে না পারলে ছেলে-মেয়েরা বিকশিত হবেনা।
গ্রামের মাতাব্বর সায়েদ বেপারী বলেন, আশপাশের কয়েকটি এলাকার মাঝে বড় আকারের মাঠ এটি। স্কুল শিক্ষার্থীসহ এলাকার শিশুরা খেলাধুরা করে। কোন পরিক্লপনা না নিয়েই মাঠটি নষ্ট করে দিচ্ছে প্রশাসন। এক্ষেত্রে শিশুদের খেলাধুলা বন্ধসহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এ বিষয়ে নজরে না নিয়ে ভবন নির্মান শুরু করে। অবিলম্ভে ভবন নির্মান কাজের কর্ম পরিকল্পনা পরিবর্তন করে মাঠ রক্ষার দাবী জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক এক সদস্য জানান, গত কয়েকবছর ধরে বিদ্যালয় ভবনের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধের পর কাজ আসে। সেক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সুবিধার কথা চিন্তা করে মাঠের দক্ষিন প্রান্তে নির্মানের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প আসার পর মাঠটি নষ্ট করে ভবন নির্মান কাজ শুরু করে। প্রশাসনকে বার বার অনুরোধ করা সত্বেও তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই ভবন নির্মাণ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের। খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হবে এলাকার শিশু কিশোররা। এছাড়া এলাকবাসীর একমাত্র মাঠে জানাযার নামাজ, ঈদের নামাজ বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্কুল মাঠ সংকীর্ণ হয়ে গেলে তাদের খেলাধূলা বা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতেও নানা ধরণের সমস্যায় পড়তে হবে। তাই তাদেরও দাবি নতুন ভবনটি যেন স্কুল মাঠের দক্ষিণ অংশে করা হয়।
সদ্য বদলী হওয়া সাভার উপজেলা প্রকৌশলী ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ জানান, বিদ্যালয়ের ভবন নিমার্ণের জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ভবনের অবকাঠামো নকশা, ব্যয় সব কিছু নির্ধারণ করেছে মন্ত্রনালয়। তারা যেখানে উপযোগী মনে করেছে সেখানেই কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে কাজ চলছে। এই মুহুর্তে ভবন পরিকল্পনা পরিবর্তন কতটা সম্ভব সে সম্পর্কে আমি বলতে পারবো না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com