রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি॥
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন আরেফিন নগর বিশ্ব কবরস্থান এলাকা যেন মাদকের এক দূর্গে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি কুখ্যাত মাদক সম্রাজ্ঞী মনিকাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হলেও এলাকা জুড়ে মাদকের লেনদেন একটুও থামেনি। বরং মনিকার পতনের পরই সেখানে নতুন এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আরেফিন নগরের পাইকারি মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী মনি দম্পতি। এই দম্পতির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি নেটওয়ার্ক, যারা দেশীয় ও সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়াবা ও গাঁজা এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আবুল হোসেন ও মনি দম্পতির মাদক কারবার এতটাই সংগঠিত যে, তারা প্রকাশ্যে লেনদেন চালালেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। তাদের পক্ষে কাজ করছে সুমন, ফয়সাল ও ফয়সালের স্ত্রী ইয়াসমিন যারা খুচরা পর্যায়ে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির দায়িত্বে রয়েছেন।
এই দম্পতিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একদল কিশোর গ্যাং সদস্য, যারা মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়িয়ে এলাকায় ভয়ভীতি ছড়ায় এবং কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা চালায়। একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মনিকা কারাগারে গেলেও মাদক বন্ধ হয়নি। এখন আবুল হোসেন-মনি দম্পতির সিন্ডিকেট পুরো এলাকা দখল করেছে। কেউ কিছু বললেই কিশোর বাহিনী পাঠিয়ে মারধর করানো হয়।
আরেফিন নগরের প্রবীণ সমাজকর্মীদের মতে, মাদক সিন্ডিকেটগুলো শুধু অপরাধ নয়, সামাজিক অবক্ষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মাদক কেনাবেচার সঙ্গে কিশোরদের জড়িয়ে ফেলার ফলে পুরো এলাকা এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। অনেক কিশোর এখন মাদক বহন, বিক্রি ও পাহারাদারির মতো কাজ করছে অল্প টাকার লোভে। একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, মনিকার মাদক চক্রের পর এই নতুন সিন্ডিকেট আরও ভয়ংকর ভাবে কাজ করছে। তারা এখন রাজনীতির ছায়া ব্যবহার করছে কখনও সরকারি দলের অনুসারী, কখনও বিরোধী দলের নাম বিক্রি করে নিজেদের রক্ষা করে।
অভিযোগ রয়েছে, আবুল হোসেন ও মনি দম্পতি কখনও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়ানোর চেষ্টা করে। স্থানীয়দের দাবি, এই সিন্ডিকেটের মূল শক্তি হলো তাদের প্রভাবশালী পরিচয় ও অর্থবল, যা ব্যবহার করে তারা শাসনিক তৎপরতা থেকে বাঁচে। এলাকাবাসী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মনিকা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম শান্তি ফিরবে, কিন্তু এখনকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। নতুন সিন্ডিকেট মনিকার চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত ও প্রভাবশালী। পুলিশ প্রশাসন জানে তবু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অভিযানের খবর আগেই ফাঁস হয়ে যায়, ফলে আসল চক্র সবসময় রক্ষা পেয়ে যায়।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা আরেফিন নগরকে মাদকমুক্ত করতে হলে শুধু অভিযানে নয়, প্রশাসনিক দৃঢ়তা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। মনিকার পতনে থেমে যায়নি মাদকের কারবার বরং জন্ম নিয়েছে এক ভয়ংকর প্রজন্মের মাদক সিন্ডিকেট, যা এখন আরেফিন নগরকে গ্রাস করছে নিঃশব্দে।