মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন
  শাহরুখ খান। ছবি: সংগৃহীত বিনোদন ডেস্ক:: জনপ্রিয় অভিনেতা ও বলিউড বাদশা শাহরুখ খান একষট্টি বছর বয়সেও ধারাবাহিকভাবে ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়ে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। মেধা, কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প তাকে ‘সুপারস্টার’ মর্যাদা এনে দিয়েছে। যশ-খ্যাতির পাশাপাশি অঢেল সম্পদের মালিক ‘কিং খান’। তবে শাহরুখ খান নিজের কৃতিত্ব নিজে নেন না। বরং এই সাফল্যের কৃতিত্ব তার জীবনের নারীদেরকে দিয়েছেন। বিশেষ করে তার সহঅভিনেত্রীদের।
এর আগে দ্য গার্ডিয়ান-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শাহরুখ খান। এ আলাপচারিতায় তার জীবনের নারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পুরোনো সেই সাক্ষাৎকার নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।
শাহরুখ খান বলেন, খুব ছোটবেলায় আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি, তারপর মাকেও। কিন্তু আমার জীবনের নারীরা, অভিনেত্রীরা আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন। আমি আজ যা কিছু, সবই তাদের (নারী) কারণে। তারাই সব কাজ করেন, আর বেশিরভাগ সময় আমি সেই কাজের কৃতিত্ব নিয়ে নিই। আমি শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে কেউ শাহরুখ খান হয়ে ওঠেননি। কিন্তু আমি চাই তারা হোক। আমি অহংকার করছি না।
বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা ও কাজলের উদাহরণ টেনে শাহরুখ খান বলেন, নাচের দৃশ্যে মাধুরী দীক্ষিত আমার হাত ধরে রাখতেন, সে আমাকে লিড দিয়েছে, আমি নই। জুহি চাওলা আমাকে কমেডি টাইমিং শিখিয়েছে, কাজল আমাকে কাঁদতে শিখিয়েছে। তারা প্রাণপণে কাজ করেছে, আর সিনেমা শেষে বলা হয় শাহরুখ খান: দ্য সুপারস্টার’। আমি জানি এটা। আমি এসব অস্বীকার করতে পারি না, কোনোদিন ভুলবও না। আমি আজ যেখানে আছি, সবই নারীদের জন্যই।
আমার ভদ্রতা, সৌজন্যতা, জেন্টলম্যান সুলভ আচরণ সবই তাদের প্রতি আমার ধন্যবাদ জানানোর উপায়। তারা সিনেমায় অসাধারণ কাজ করে, প্রতিটি সিনেমাতেই। তিনি বলেন, শাহরুখ খান।
নারী পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে অন্য একটি সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন, পুরুষেরা তাদের অনুভূতিকে ভাগ করে রাখে। কিন্তু নারীরা অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও ব্যাপকভাবে অনুভব করেন। তারা সব দিকেই ছড়িয়ে যান। আমার মনে হয়, আমি নারীদের সঙ্গে করতে উপভোগ করি। কারণ নারীদের সংবেদশীলতা। তারা সিনেমাকে আরো সুন্দর করে তোলেন।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।