বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন

সদরপুরে হারানো শিশুকে বাবার হাতে তুলে দিলো ইউএনও

সদরপুরে হারানো শিশুকে বাবার হাতে তুলে দিলো ইউএনও

মোঃ সাব্বির হাসান, সদরপুর(ফরিদপুর)প্রতিনিধি:: শিশুটির বয়স প্রায় চার বছর। অল্প স্বপ্ল করে কথা বলতে পারে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের একটা সোফা সেটের উপরে বসে খেলা করছিল। শিশুটির উপলদ্ধি নেই ও হারিয়ে গেছে মায়ের কোল থেকে। অচেনা স্বল্প সময়ের পরিচিত দুই স্কুল ছাত্রের সাথে ভাই ভাই সম্বোধন করে তাদের সাখে খেলা করছে। ছাত্র দুটিও তাকে বোনের মত আদর করছে। ওর পরিবারকে খুঁজতে সে সময় ব্যস্ত থাকেন ইউএনও। শিশুটি খেলায় মগ্ন। নেই বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো আকুতি বা কান্না।

মা ভারসাম্যহীন। ভারসাম্যহীন জীবনে তিনি সন্তানের জননী। ভারসাম্য থাকায় এখন শিশুটির বাবার সাথে সংসার টিকেনি। ওর মা-বাবা দু-ভূবনের বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছেন। কেহ কারো খোজ খবর রাখে না। তাদের পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে বড় শিশুটির নাম লামিয়া (৪), দ্বিতীয় সন্তান হিসাবে একটি পুত্র। আর তৃতীয় সন্তান হিসাবে মায়ের কোলে রয়েছে দেড় বছরের এক কন্যা শিশু।

এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, মায়ের সাথে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পথে পথে ঘুরে বেড়ায় পরিবারের শিশুগুলো। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের বাবুরচর বাজার মসজিদের সামনে ফেলে রেখে যায় চার বছরের শিশু লামিয়াকে। শিশুটি মসজিদের সিড়ির উপরে খেলা করছিল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল ঘনিয়ে আসলে ক্ষুধার জন্য কাঁদতে থাকে। ওই সময় বাবুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী একজন দশম শ্রেণির ছাত্র মোঃ ফাহিম হোসেন আরেকজন সপ্তম শ্রেণির মোঃ আজমির শিশুটিকে বাজার থেকে কিছু বিস্কুট কিনে দেয়। এর পর থেকে ওই শিশুটি তাদের পিছু নেয়। অনেক খোঁজাখুজি করে বাজারে ওর মাকে না পেয়ে প্রথমে তারা(ছাত্ররা) তাদের বাসায় নিয়ে ওকে খাবার দেয়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে শিশু লামিয়াকে নিয়ে তারা মহাবিপদে পড়ে। পরে শিশুটির বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়। ওই বাবুরচরের বাসিন্দা ও সদরপুরের সাংবাদিক রোকনুজ্জামানের সহায়তায় ওই দুই ছাত্র শিশুটিকে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। শিশুটি সনাক্ত বা তার পরিবাকে খোজার জন্য বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে সংবাদ দেওয়া হয়। কিন্তু তার কোনো সন্ধান মিলছিল না। খালি শরীরে থাকায় ইউএনও শিশুটিকে কয়েক সেট জামাকাপড়, সেন্ডেল, ব্রাশসহ খাবার কিনে দেন।

ইউএনও জাকিয়া সুলতানা সদরপুর সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী শামীম আহম্মেদ এর সাথে শিশুটির ব্যাপারে পরামর্শ করে ফরিদপুরের সরকারি শিশু পরিবার (সেবা হোম) এতিমখানায় হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। খুজে পাওয়া শিশুটির তথ্য সংগ্রহের জন্য ইউএনও’র কার্যালয়ে ছুটে আসেন সদরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি। ওই সাংবাদিক শিশুটির সাথে কথা হলে হঠাৎ বাজারখোলার নাম বলে ওঠে। সদরপুর থেকে ফরিদপুরে যাওয়ার পথে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মজুমদার বাজারের পাশের একটা জায়গার নাম বাজারখোলা। এরপর ওর পরিবারকে খোজার জন্য ইউএনও বেরিয়ে পড়েন। কয়েক জায়গায় খোঁজার পর কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাটাখালীতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিশুটির সন্ধান পাওয়া যায়। ওর বাবার নাম রব মৃধা। তিনি নিম্ম আয়ের একজন মানুষ। তার স্ত্রী মানষিক ভারসাম্য থাকায় তার সাথে সংসার নষ্ট হয়ে গেছে। শিশুটির মাকে খুজে না পেয়ে তার বাবা রব মৃধার হাতে শিশু লামিয়াকে তুলে দেন সদরপুরের ইউএনও জাকিয়া সুলতানা। ওই সময় কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা মুন্সী ইশারতসহ এলাকার ওই অর্ধশতাধিক লোকজন হাজির হয় শিশুটিকে দেখতে।

শিশুটির প্রসঙ্গে ইউএনও জাকিয়া সুলতানা জানান, আমি ওর ব্যাপারে অবগত হলে আমার অফিসে নিয়ে আসতে বলি। ওর বা ওর পরিবারের সন্ধান খুজতে শুরু করি। প্রথমত না পেয়ে সরকারিভাবে শিশুটিকে পুর্নবাসনের জন্য ফরিদপুর শিশু পরিবার বালিকা সেবা হোমে পাঠানো সিদ্বান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার পরিবারের সন্ধান পেয়ে শিশুটির বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com