মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ১২:১৮ অপরাহ্ন
আতিকুর রহমান, ভেদরগঞ্জ প্রতিনিধি:: পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়ক ও শেখ হাসিনা সড়ক থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত অধিগ্রহণকৃত ঘরবাড়িসহ স্থাপনার নিলাম সংক্রান্ত তথ্য চাওয়ায় শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসে ডেকে নিয়ে সাংবাদিককে লাঞ্চিত করেছে ওই অফিসের দুই কর্মচারীসহ স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার। বিষয়টি নিয়ে থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরী করেছেন ভূক্তভোগী সাংবাদিক।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) শরীয়তপুরের পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সাধারণ ডায়েরীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভূক্তভোগী সাংবাদিক ও সাধারণ ডায়েরী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর শহরের প্রেমতলা থেকে পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়ক ও শেখ হাসিনা সড়ক (মনোহর মোড়) থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই প্রান্তের অধিগ্রহণকৃত ঘরবাড়িসহ স্থাপনার নিলাম সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত ১ জুলাই তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন বাংলাদেশ সমাচারের প্রতিনিধি রুহুল আমিন জুয়েল রানা নামে এক সাংবাদিক। এরপর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেই দিচ্ছি বলে গড়িমসি করতে থাকেন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার দুপুরে নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইলে কল করা হলে তিনি তথ্য নেওয়ার জন্য সড়ক বিভাগের অফিস সহায়ক গোলাম মাওলার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। নির্বাহী প্রকোশলীর কথা অনুযায়ী সড়ক বিভাগে যান তথ্য প্রাপ্তির আবেদনকারী সাংবাদিক রুহুল আমিন জুয়েল রানাসহ তার সহকর্মী শরীয়তপুর প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ। এসময় জুয়েল রানা ও সাইফ রুদাদ অফিস সহায়ক গোলাম মাওলাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জুয়েল রানাকে নিয়ে তার কক্ষ থেকে বের হয়ে গিয়ে জুয়েল রানাকে অন্য একটি জায়গায় জোরপূর্বক বসিয়ে রাখেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে সড়ক বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার, অফিস সহায়ক গোলাম মাওলাসহ স্থানীয় ঠিকাদার সরোয়ার তালুকদার, রাব্বিসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন অফিস সহায়কের কক্ষে প্রবেশ করে সাইফ রুদাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তথ্য না দিয়ে লাঞ্জিত করে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেয়। এসময় তারা আবার সাইফ রুদাদকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে পুনঃরায় তথ্য চাইলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। এরপর সোমবার রাতে সাইফ রুদাদ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করে লাঞ্চনার শিকার সাংবাদিক রুহুল আমিন জুয়েল রানা বলেন, অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা তথ্য দিবেন বলে আমাকে অন্য একটি রুমের সামনে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক বসিয়ে রাখে। এরপর গোলাম মাওলা, সালমা, সরোয়ার, রাব্বিসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত অফিস সহায়কের কক্ষে ডুকে সাইফ রুদাদকে লাঞ্চিত করে আমাদের দুইজনকেই প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সড়ক বিভাগ থেকে বের করে দেয়। ঘটনার প্রমাণাধি সড়ক বিভাগের সিসি ক্যামেরা চেক করলেই পাওয়া যাবে। এঘটনায় সাইফ রুদাদ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ভূক্তভোগী সাংবাদিক সাইফ রুদাদ বলেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন জুয়েল রানার অনুরোধে সড়ক বিভাগে গিয়েছিলাম। অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা তথ্য দিবেন বলে জুয়েল রানাকে অন্যত্র ডেকে নিয়ে যায়। এসময় আমি অফিস সহায়কের কক্ষে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা, কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার, ঠিকাদার সরোয়ার, রাব্বিসহ বেশ কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেয়। আমি বারবার বলার চেষ্টা করছিলাম, আমি জুয়েল রানা নই, কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শোনেনি। আমি এঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। আমার সহকর্মী জুয়েল রানাসহ আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি। আমি এঘটনার বিচার দাবি করছি।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক বিভাগ শরীয়তপুরের অফিস থেকে তথ্য চাওয়ায় কর্মচারী ও ঠিকাদার মিলে সাংবাদিককে হুমকি-ধামকি দিয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে এক সাংবাদিক থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। আদালত থেকে জিডি তদন্তের আদেশ পাওয়া মাত্রই আমরা তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকোশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, অফিসের মধ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে অপ্রীতিকর একটি ঘটনা ঘটেছে। আমি অফিসে ছিলাম না। ঠিকাদার সরোয়ারকে সড়ক বিভাগে আসতে নিষেধ করেছি। সালমাকে সতর্ক করে দিয়েছি। ওই সাংবাদিককে আজকের মধ্যে তথ্য দিয়ে দেব।