শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

সড়কে বেপরোয়া বালুবাহী গাড়ি ॥ নেই প্রশাসনের নজরদারি

ঢাকার পাশে দোহার উপজেলার মৈনট ঘাটে ও আশপাশে বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু রেখে সারা বছর বিক্রি করে থাকেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। ঢাকার পাশে দোহার উপজেলার মৈনট ঘাটে ও আশপাশে বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু রেখে সারা বছর বিক্রি করে থাকেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা।

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঢাকার পাশে দোহার উপজেলার মৈনট ঘাটে ও আশপাশে বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু রেখে সারা বছর বিক্রি করে থাকেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। এসব বালু দোহার ও নবাবগঞ্জের এই দুই উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হয়। বালু বহন করা হয় পিকআপ ও ট্রাক দিয়ে। ইতিমধ্যে দেখা গেছে সড়কে বালুবাহী গাড়িগুলো চলাচলের গতি একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যা সড়কে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।

সরেজমিনে মৈনট ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, মৈনট ঘাট থেকে বালু নিয়ে আসা গাড়িগুলো যেমন বেপরোয়া গতি, তেমনি বালু বহনকারী বেশিরভাগ গাড়ি চালক দক্ষ নয়। তাদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে ঝুঁকি রেখে গাড়ির ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মালামাল যতটুকু ধারণ ক্ষমতা নেওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি বহন করা হচ্ছে গাড়িগুলোতে। এতে বালুবাহী গাড়ি চলাচলে প্রতিনিয়ত সড়কে বাড়ছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। এছাড়া যেসব ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তারা যখন গাড়ি চালায় তখন ভয়ংকর রূপ নেয় সড়কে। গাড়ির গতি দেখে ভয়ে আতঙ্কে থাকে সড়কে থাকা পথচারীরা। বিশেষ করে সকালে দেখা যায় বেশি ভয়ংকর চিত্র। এমনভাবে চলে যেন তারাই সড়কের রাজা। সকালবেলা সড়কে অনান্য গাড়ি চলাচল কম করায় এসব বালুবাহী গাড়ি পুরো সড়ক দখলে নিয়ে চলাচল করে থাকে।

প্রয়োজনীয় স্থানে ড্রাইভার দেয় না কোন সংকেত। ডান বা বামে থামাবে তারও নেই বাতির সংকেত। কার আগে কে যাবে যেখানে-সেখানে করা হয় ওভারটেকিং। সকালবেলা কেউ কোন কাজে বা হাটতে বের হলে আতঙ্কে এসব বালুবাহী গাড়ির জন্য ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ও সড়ক পারাপার হতে হয়। তথ্য বলছে, দোহারের কার্তিকপুর, বাঁশতলা এবং নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা চালনাই এলাকায় মাঝে মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বেশির ভাগই মৈনট থেকে বালু বহনকারী গাড়ি। স্থানীয়রা জানায়, দক্ষ ড্রাইভার না থাকায় বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারায় এসব বালু বহনকারী গাড়ি। ফলে আহত নিহতের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে থাকে বিভিন্ন সময়।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, মৈনট থেকে আসা এসব বহনকারী ট্রাক- পিকআপ গাড়িতে থাকা বালু বাতাসে উড়ে যায়। বালু ঢেকে পরিবহন করার কথা থাকলেও এর কিছুই মানছেন না এখানকার গাড়ি চালকরা। এতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয় অন্যসব ছোট গাড়ি চালক, পথচারী ও যাত্রীদের। বিশেষ করে বেশি বিপাকে পড়তে হয় মোটরসাইকেল চালক ও রিক্সা চালকদের। বালুবাহী গাড়ি যখন চলাচল করে তখন গাড়িতে থাকা বালু বাতাসে উড়তে থাকে।

ঐসব বালুর কারণে চলাচলে বিঘœ হয় বলে অভিযোগ করেছেন এই অঞ্চলের মানুষ। এসব বালু চোখে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেকের। তবে হাতেগোনা কিছু গাড়িতে বালু ঢেকে পরিবহন করতে দেখা গেছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মেজবাহ উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, চলন্ত গাড়ি থেকে চোখে বালু গেলে চোখ প্রাথমিক ভাবে জ্বালাপোড়া ও পানি বের হবে। পরবর্তীতে কর্নিয়া হয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে চলন্ত গাড়ি থেকে বালু মোটরসাইকেল চালকদের চোখে গেলে অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রত্যেক গাড়ি চালকদের আইন অনুযায়ী বালু ঢেকে পরিবহন করা উচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পথচারী ও স্থানীয় দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, বালু বহনকারী গাড়ির জন্য সড়কে চলাচল করা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব গাড়ি এতটাই বেপরোয়া যে তারা কোন নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই গাড়ি নিয়ে ধাপিয়ে বেড়ায়। তারা আরও বলেন, গাড়ি যখন দ্রুত গতিতে চলাচল করে এতে গাড়িতে থাকা বালু চোখ, মুখ, কান ও মাথার চুলে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। আমরা চাই যেসব গাড়ি চালকদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই সেসব গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হোক। পাশাপাশি বেপরোয়া গতিতে চলাচল বন্ধ করতে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করাটা অনেক জরুরী।

নবাবগঞ্জ থেকে মৈনট মিনি কক্সবাজারে ঘুরতে আসা সেলিম, আরিফ, আরাফাতসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, কার্তিকপুর আসার পর জ্যামের কারণে মৈনট যেতে সময় লেগে ৩০-৪০ মিনিটেরও বেশি। বালুবাহী গাড়ি চলাচল ও যেখানে সেখানে বাস ও বালু বহনের ট্রাক পার্কিং করার কারণে এমনটা ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া বালু ঢেকে পরিবহন না করায় বাতাসে উড়ে চোখে গেলে নানা সমস্যা হয়। এগুলো স্থানীয় প্রশাসনের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই পর্যটকরা।

এসব বিষয়ে কথা হয়ে বেশ কয়েকজন বালু বহনকারী গাড়ি চালকের সাথে। ঢাকা মেট্রো অ ১৪-০৬৫৯ এই নম্বরের (মিনি ট্রাক) গাড়ি চালক মো. টুকু বলেন, আমার কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তবে লাইসেন্স করতে দিয়েছিলাম। দালালের খপ্পরে পড়ায় আর করা হয়নি। এদিকে এখানে যারা বালু ব্যবসা করে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য কথা বলতে গেলে মালিক পক্ষের কারও দেখা মিলেনি।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইলোরা ইয়াসমিন মুঠোফোনে একুশের কণ্ঠের প্রতিবেদককে বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি চলানোর কোন সুযোগ নেই। মানুষের চলাচলে বিঘ্ন করে বালু পরিবহন করার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে এবং প্রমাণ মিললে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু বালু বহনকারী গাড়ি নয়। সব গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স জরুরী। এসব বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com