বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে হঠাৎ বন্যা, কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: ‎উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টির প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ প্লাবিত হওয়া এলাকাগুলোতে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে নদীতীরবর্তী হাজারো পরিবার।

‎বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ৩টায় হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০মিটার, যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার)।

‎এর আগে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টায় নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার ৪টি উপজেলার তিস্তা তীরবর্তি ১৫টি গ্রামে বন্যা দেখা দেয়। হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এসব গ্রামের বাড়ীঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট সহ ফসলের ক্ষেত। খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট।

‎পানির তোড়ে রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী এলাকার একটি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি কিছুটা কমলেও ব্যারাজের ভাটিতে থাকা হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, গড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদী তীরবতী নিম্নাঞ্চলগুলোর ১৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলী জমি ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।



‎নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক এলাকা এখনো জলমগ্ন। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, বসতঘর, ফসলি জমি ও পুকুর। বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নৌকা ও বাঁশের ভেলা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। আমন ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে, পুকুরে মাছ ভেসে গেছে।

‎তিস্তা তীরবর্তী মহিষখোচা এলাকার মনির হোসেন ও আব্দুর রশিদ জানান, পানিতে তাদের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। ফসলের ক্ষেতে পানি উঠেছে।

‎খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের চারপাশ ডুবে গেছে। কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। রাস্তাঘাটও পানির নিচে।

‎আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের ইয়াকুব আলী জানান, রাতে পানি বাড়তে থাকায় রান্না করা সম্ভব হয়নি। সকাল থেকে না খেয়েই আছি। এখনো কেউ খোঁজ নেয়নি।



‎বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ভারতের উজানে কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে পানির গতি তীব্র হয় এবং রাতেই তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। তবে বুধবার সকাল থেকে পানি কমছে।

‎পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার জানান, তিস্তার পানি রাতের দিকে বিপৎসীমার ওপরে উঠেছিল। এতে কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে বুধবার সকাল থেকে পানি দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে।

‎জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে এবং অচিরেই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তা বিতরণ শুরু হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com